ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর এবং তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও ব্যর্থতার অভিযোগে প্রক্টরের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গণপদযাত্রা করেছে ১২টি সংগঠন নিয়ে সদ্য আত্মপ্রকাশ পাওয়া ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই গণপদযাত্রা শুরু হয়।
পদযাত্রাটি নীলক্ষেত-কাটাবন হয়ে শাহবাগে এসে শেষ হয়। এর আগে রাজু ভাস্কর্যে তারা একটি সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ‘সেদিন হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল, আমাদের হত্যা করা। তারা হত্যা করতে পারেনি। আমাদের ওপর এ ধরনের হামলা নতুন না। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে একের পর এক হামলার শিকার হয়েছি আমরা। কিন্তু একটিরও বিচার পাইনি। তাই এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন আমাদের ওপর দু দফায় হামলা চালানো হয়েছে। প্রথম দফা হামলা করেছে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। দ্বিতীয় ধাপে হামলা চালিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন সনজিত এবং সাদ্দাম। তাদের এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি।’
এ সময় ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘সারাদেশে আজ ছাত্রলীগ ত্রাসের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করেছে। শুধুমাত্র দেশের স্বার্থে কথা বলায় আমাদের ভাই আবরারকে হত্যা করেছে ভারতের দালালরা। সন্ত্রাস-দখলদারিত্বকে আমরা ভেঙে চুরমার করে দেবো।’ তিনি তাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ছাত্রলীগ নেতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘সারাদেশের ঘটনা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। ন্যায্য অধিকার নিয়ে দাঁড়ালে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হতে হয়।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন– ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর, স্বতন্ত্র জোট থেকে শামসুন্নাহার হলে নির্বাচিত ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি প্রমুখ।
এর আগে, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসু ভবনে নিজ কক্ষে ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর গায়েব হয়ে গেছে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ। কারা এই ফুটেজ নিয়ে গেছে প্রশাসনসহ কেউ বলতে পারছে না। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ ভিপি নুরের। তবে প্রথম দিন থেকেই ছাত্রলীগ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। এ ঘটনার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’ প্লাটফর্ম। তাদের জোটভুক্ত দলগুলো হচ্ছে– বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, স্বতন্ত্র জোট এবং ছাত্র গণমঞ্চ।