ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মোহাম্মদ সালেহীন, যার বাবা দ্বীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় নেতারা।
গত রবিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ঢাকা দক্ষিণের ২৮নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ সালেহীনের নাম দেখে ক্ষুব্ধ চকবাজার থানা আওয়ামী লীগ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি বাসিন্দাদের অভিযোগ, সালেহীন কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি।
তার বাবা মুসলীম লীগের সক্রিয় সদস্য ও শান্তি কমিটির নিবন্ধিত কর্মী ছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বীন মোহাম্মদ ও তার পরিবার এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। রাজাকারপুত্র সালেহীনকেই তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাইয়ে দিয়েছেন।
খাজে দেওয়ান প্রথম লেনের বাসিন্দা আবদুল করিম নিজেকে ও শহীদ পরিবারের সদস্য দাবি করে ওই মিষ্টি বিতরণ করতে দেখেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। আমাদের চোখের সামনে পাকিস্তানিরা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পুরান ঢাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে। সালেহীনের বাবা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছেন, ছিলেন শান্তি কমিটির নিবন্ধিত কর্মী।
১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার দিনই দ্বীন মোহাম্মদ ও তার পরিবারের লোকজন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে। সেই রাজাকারের সন্তান আজ আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন পেয়েছে। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। ’
সালেহীনকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ২৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সালেহীন ২০০১ সালে যুবদলের কর্মী ছিল। সে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক কোনো সদস্যও না। তাকে নমিনেশন দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ। ’
আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকায় সালেহীনের সাংগঠনিক পরিচয় হিসেবে ২৮নং ওয়ার্ডের সহ সভাপতি রয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নজরুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি হয়। ওই সময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। তাহলে তিনি কী করে সহসভাপতি হলেন? চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস সুমন বলেন, ‘প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের সময় আমরা সালেহীনের অতীত কর্মকাণ্ড ও তার পরিবারের বিষয়ে মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথার কোনো পাত্তা দেননি। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে প্রার্থী দিয়েছেন। দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছে। তাদের যে কাউকে মনোনয়ন দিক। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে আমরা কোনো রাজাকারের সন্তানকে মেনে নেব না। ’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ সালেহীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বাবা ৭১ সালে ২২ মার্চ মারা যান। শুধু হিংসার বশবর্তী হয়ে একটি মহল এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।’ ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হলেও কীভাবে সহসভাপতি হলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। ৯৭ সালে জাপান থেকে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হই। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমার নাম সহসভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। তবে এখনো কমিটি অনুমোদন হয়নি। ’
২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অভিযোগ আমলে না নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।