মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনায় অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের অনশন কর্মসূচি পঞ্চমদিনেও অব্যাহত রয়েছে। এদিন পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে অনশনে যোগ দিয়েছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরাও। শ্রমিকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যেতে অনড় রয়েছেন।
খুলনার প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, ইস্টার্ন, আলিম, ক্রিসেন্ট জুট, যশোরের জেজেআই, কার্পেটিং মিল শ্রমিকরা নিজ নিজ মিলগেটে এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তবে স্টার জুটমিলের শ্রমিকরা খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে কর্মসূচি পালন করছেন। শ্রমিকরা খুলনার নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নেওয়া যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, খুলনার সাতটি পাটকলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। সবখানেই শ্রমিকদের মজুরি আট থেকে ১০ সপ্তাহ বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বিমার বকেয়া প্রদান, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার অর্থবরাদ্দ, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দাবিগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বাদে বাকি সাতটিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ পাটকলগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে চালু থাকা ওই দু’টি পাটকলে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। পাটকলগুলোতে প্রতিদিনের উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় সচিবলায়ে পাটমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হামিদুর রহামনের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের দল খুলনা থেকে রওয়ানা দিয়েছে।
পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, সাতটি পাটকলের প্রায় ২০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এ অনশনে অংশ নিয়েছেন। টানা অনশনে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা শরীরে স্যালাইন নিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। যতদিন দাবি না মানা হবে, ততদিন অনশন চলবে।
শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সবশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সে অনুযায়ী শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।