মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফে তালিকাভুক্ত আরও অর্ধশতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী ২৯ জানুয়ারি টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে ওই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এতে চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের শীর্ষ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে শর্তসাপেক্ষ আত্মসমর্পণ করেছিল। তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাইও ছিল। এই ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন কারাগারে মারা যায়। বাকি ১০১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযুক্তপত্র দাখিল করে পুলিশ।
এবার নতুন করে আরও অর্ধশতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। তিনি জানান, ‘দ্বিতীয় দফায় চলতি মাসের ২৯ জানুয়ারি ৪০-৫০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হলেও নিয়মিত অভিযানে কোনও শিথিলতা আসবে না। আত্মসমর্পণের আওতায় না এসে কারবারিরা কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’
আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর পরিবারের একজন সদস্য জানান, ‘বন্দুকযুদ্ধ প্রতিদিনই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কেউ না কেউ নিহত হচ্ছে। তাই ভয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করানোর ব্যাপারে গত পাচঁ মাস ধরে কাজ করছেন। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে প্রয়োজনীয় সম্মতি পাওয়ার পর স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছুক এসব ইয়াবা কারবারিদের তালিকা তৈরি হয়।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফে ইয়াবা বন্ধে কড়াকড়ি জারি থাকায় মাদক কারবারিরা রুট পরিবর্তন করছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কমেছে ইয়াবা ব্যবসা। যদিও ইয়াবা পাচারে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে মিয়ানমারের নাগরিকরা। তারা এখন মিয়ানমার থেকে সরাসরি সমুদ্রপথে ও অন্যান্য রুটে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রাম, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায়। এর সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।
এছাড়া সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা শিবিরেও চলছে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা। ফলে প্রতিনিয়িত ইয়াবাসহ ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। মাদক বিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছে মাদক কারবারি রোহিঙ্গারাও।
চলতি মাসের ২৪ দিনে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৮ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬ জনই রোহিঙ্গা।
প্রসঙ্গত ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে ইয়াবা কারবারি, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৫৬ রোহিঙ্গাসহ ২০৯ জন ইয়াবা কারবারি ও ডাকাত-সন্ত্রাসী নিহত হয় কক্সবাজার জেলায়। পাশপাশি গত বছর ১ কোটি ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭০ পিস ইয়াবাসহ ২ হাজার ৩৩৮ জনকে আটক এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান থাকায় ইয়াবা ব্যবসা কমে এসেছে। যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। তবে একইসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, না হলে পুরোপুরিভাবে মাদক বন্ধ করা কঠিন।’