সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দ্বারা বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিরেক্টর জেনারেলকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান মামুন তাদের উদ্দেশে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, গত ২৪ জানুয়ারি ২০২০ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৩ দিনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে সাতজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএসএফ কর্তৃক ১ হাজার ১৪৪ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। আরেকটি মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১১ সালের জানুয়ারি ও নভেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ এর গুলিতে ৩৩ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে এবং নির্যাতনে ৫ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে।
রিটে বলা হয়, ভারতের সঙ্গে চীন, পাকিস্তান, মায়ানমার, নেপাল, ভূটান ও বাংলাদেশ-এই ছয়টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রধানত বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি ছুড়ে হত্যা করে থাকে এবং যুদ্ধ ব্যতীত ভারতের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড প্রায় শূন্য।
‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০ এর ধারা ১১ (১) (ক) ও (থ) অনুযায়ী সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সীমান্তে চোরাচালান, নারী-শিশু পাচার, মাদকদ্রব্য চোরাচালানসহ সব আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধসমূহ প্রতিরোধের দায়িত্ব বিজিবির। কিন্তু সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সার্বভৌমন্ত্ব রক্ষার ইস্যুতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার’ এবং ‘জীবন ও ব্যক্তির স্বাধীন অধিকার রক্ষণ’ প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অপরদিকে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের যথাযথ বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেক্ষেত্রে সীমান্তে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক কোনও অপরাধ করলে তার আইনগত অধিকার ও বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে নোটিশ গ্রহীতাদের সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, কোন বিদেশি যথাযথ কাগজগত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে তা দেশটির বৈদেশিক আইন ১৯৪৬ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও কারাদণ্ড হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনও বাংলাদেশি যদি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে ভারতীয় আইনে তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং কোনোভাবেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করতে পারবে না। এক্ষেত্রে বিএসএফ স্বয়ং তাদের ভারতীয় আইনের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি নাগরিকদের রক্ষায় যথাযথ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তাই, নোটিশ অনুসারে নোটিশ গ্রহীতাদেরকে বাংলাদেশের সংবিধান রক্ষা ও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের রক্ষায় অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।