সাবেক কর্মীর কাছে আড়ংয়ের ‘চেঞ্জ রুমে’র ১২০টি ভিডিও!

একটি দুটি নয়, ১২০টি ভিডিও তার কাছে। আড়ংয়ের নারীকর্মীদের চেঞ্জ রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় এসব ভিডিও করেছিল সে। এরপর যাদের ভিডিও করা হয়েছে, তাদের কাছে সেই ভিডিও পাঠাতো ফেসবুকের মেসেঞ্জারে। কখনও অর্থ দাবি কখনও বিকৃত চাহিদার কথা জানাতো তাদের। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি। এক বিক্রয়কর্মীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ওই তরুণকে গ্রেফতার করেছে। তার নাম সিরাজুল ইসলাম সজীব (২২)। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা (নম্বর ৩৫) দায়ের করেন। এসআই ফারুক হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আড়ংয়ের একজন অফিসার আমাদের কাছে এসেছিল। তাদের দেওয়া তথ্য মতেই আমরা সজীবকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করি। সজীবকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারী ১৬ জানুয়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৯৫৫) করেন। ওই জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সিরাজুল ইসলাম সজীব তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে সীমান্ত সৈকত নামে আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলে। ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে। এসময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে এবং তার কথামতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারী বিষয়টি উল্লেখ করে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে শনিবার দুপুরে কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে সিরাজুল ইসলাম সজীবকে গ্রেফতার করে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া সজীব আড়ংয়ের বনানী শাখার সাবেক কর্মী। তার বাবার নাম মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সী। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদে। ১০৯৮ নম্বর পূর্ব শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় সে থাকতো। তার কাছ থেকে একটি রেডমি ৫ প্লাস ফোনসেট জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে তার নিজের ফেসবুক আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আড়ংয়ের ওই নারীকর্মীর ভিডিও করা এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব জানিয়েছে, সে আড়ংয়ে চাকরি করতো। চাকরিরত অবস্থায় সে চতুর্থ তলার কর্মচারী চেঞ্জ রুমের বাইরের সানসেট-এ দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে আড়ংয়ের নারী কর্মচারীদের অজান্তে তাদের নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার সময় ভিডিও ধারণ করতো। তার কাছ থেকে ১৩ জন নারীকর্মীর ১২০টি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক নারীকর্মীর ভিডিও করার অভিযোগে ডিসেম্বর মাসে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তার কাছে আগের করা সব ভিডিও সংরক্ষিত ছিল। তাকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তার কাছ থেকে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম জানান, সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে বনানী আউটলেটের একজন বিক্রয় প্রতিনিধির ১৬ জানুয়ারি বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে আমরা অবহিত আছি। এই মামলাটি দায়ের করার ব্যাপারে অভিযোগকারীকে শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছি। আড়ং যৌন হয়রানিমূলক যেকোনও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সর্বদা কঠোর অবস্থানে থাকে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত আড়ং সংশ্লিষ্ট যেকোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কঠোর হস্তে দমনের জন্য তখনই পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বনানী আউটলেটের সাবেক বিক্রয় প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একজন সহকর্মীর যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *