সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে ভারতের দিল্লিতে চলমান সংঘর্ষে মুসলিমদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসআইআরএফ)। তবে মার্কিন সংস্থার এ অভিযোগকে খারিজ করে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ করা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরে আসার পর দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।
ইউএসসিআইআরএফের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর শেষ হতেই প্রাণঘাতী দাঙ্গায় সহিংস হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। মুসলিমদের লক্ষ্য করে উন্মত্ত জনতা হামলা চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি আমরা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি দাঙ্গায় বেশ কিছু মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বহু মুসলিম। গতবছর ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলা কালে এ অশান্তির শুরু হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফের কমিশনার অনুরিমা ভার্গব বলেন, দিল্লি জুড়ে যে নৃশংস এবং লাগামছাড়া হিংসা বেড়ে চলেছে, তা চলতে দেওয়া যায় না। সব নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা উচিত ভারত সরকারের। অথচ তার বদলে খবর আসছে, মুসলিমদের ওপর হিংসাত্মক হামলা রুখতে কোনো ভূমিকাই নেয়নি দিল্লি পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। যে মুহূর্তে ভারতে বেছে বেছে মুসলিমদের হামলার লক্ষ্য করা হচ্ছে, তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের।’
ইউএসসিআইআরএফের চেয়ারপারসন টোনি পারকিন্স বলেন, ‘দিল্লিতে যে হিংসা চলছে, যে ভাবে মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়ি, দোকান এবং ধর্মীয় স্থান জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়াই দায়িত্বশীল সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। তাই মুসলিমদের এবং যারা যারা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে পদক্ষেপ করতে আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’
এদিকে ইউএসসআইআরএফের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার টুইটারে বলেন, ‘ইউএসসিআইআরএফের অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়, বরং বিভ্রান্তিমূলক। বরং মনে হচ্ছে, বিষয়টির রাজনীতিকরণই তাদের উদ্দেশ্য। হিংসা রুখে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা আমাদের সংস্থাগুলি। সরকারের শীর্ষস্তরের প্রতিনিধিরা বিষয়টি তদারকি করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। এমন সংবেদনশীল সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো মন্তব্য না করতে আমরা অনুরোধ করছি।’
এর আগে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে ‘ইস্যু ব্রিফ: ইন্ডিয়া’ নামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএসসআইআরএফ। সেসময়ও তাদের প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে খারিজ করেছিল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।