রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪২ জন ছিনতাইকারী ও সালাম পার্টির (অপরিচিতদের সালাম দিয়ে পরে ছিনতাই) সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগ। এসময় ছিনতাইকৃত ৭৪টি বিভিন্ন ব্যান্ডের মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়। রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সব টিম এক যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান চালায়। মোবাইল ফোন ছিনতাই রোধে রাজধানীতে মোবাইল ফোন মেরামতের দোকানগুলোতে নজরদারি করা হবে বলে জানায় পুলিশ।
শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। তিনি জানান, মোবাইল ফোন ছাড়াও আটক ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে একটি ট্যাব, দুটি ল্যাপটপ, ১৩টি ছুরি, দুটি চাপাতি জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইট নেই। যেসব ল্যাম্পপোস্ট আছে সেগুলো বেশিরভাগ নষ্ট। এর জন্য গলিগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এতে ওই সব এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। যেসব এলাকায় এমন অবস্থা, সেখানে আমাদের দায়িত্বশীলদের নজর দেওয়া দরকার। নগরবাসীকেও ওইসব এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা সুযোগ পেলেই ছিনতাই করে। তাদের আইনের আওতায় এনে সাজার ব্যবস্থা না করা হলে অপরাধ কমানো সম্ভব হবে না। বেশিরভাগ সময় বাস-লঞ্চ টার্মিনাল এবং অন্ধকার গলিতে ছিনতাই হয়ে থাকে। আর সেটা গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত।’
তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, মোতালেব প্লাজাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মোবাইল ফোন মেরামত দোকানের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ছিনতাই হওয়া মোবাইল কোথায় যায় এটা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, ছোটখাটো যেসব মোবাইল পার্টসের দোকান আছে তারা এসব চোরাই মোবাইল কিনে থাকে। বসুন্ধরা, মোতালেব প্লাজার অনেক দোকানদার এসব চোরাই মোবাইল কেনে। এসব মোবাইল সরাসরি মানুষের কাছে বিক্রি করে না। বিশেষ করে কারও মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে চোরাই মোবাইলের পার্টস খুলে বিক্রি করা হয়। এসব পার্টস বিক্রি করলে যে লাভ হয় তা মোবাইল বিক্রি করলেও হয় না। চোরাই মোবাইলের বিক্রি ও কেনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের আমরা চিহিৃত করেছি। অচিরেই সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হবে।’
মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই বেশি হয়- এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘যে সময়গুলোতে এ ধরণের কর্মকাণ্ড ঘটে তা বন্ধ করতে আমরা বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে পেট্রল জোরদার করবো। সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে ওই সব এলাকায় চিহ্নিত ছিনতাইকারী যারা তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
শনিবার ভোরে কমলাপুরে রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় রিকশা থেকে পরে তারিনা বেগমের মৃত্যু বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। এই ব্যাপারে মামলা হবে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে।’
ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরবাসী মামলা করতে নিরুসাহিত হয়, এর পেছনে পুলিশের দায় আছে কিনা এমন প্রশ্নে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘দায় বললে হবে না, এটা দায়িত্বশীলতা। নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব, কোথাও কোনও অপরাধ হলে তা থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়া। এছাড়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব হয় না অপরাধ সম্পর্কে জানা কিংবা অপরাধীকে শনাক্ত করা। নগরবাসীকে বলতে চাই, আপনারা থানায় যাবেন, অভিযোগ দেবেন। থানা যদি মামলা বা অভিযোগ নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে আমাদের ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’