তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে কুমিল্লার হোমনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহারের দাবি করেছেন কুমিল্লা-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেলিমা আহমাদ মেরী। সংবাদ সম্মেলনে ইউএনও তাপ্তি চাকমা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এ ঘটনার পর ইউএনও সাত দিনের ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। তবে জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর দাবি করেছেন, ইউএনওকে প্রত্যাহার করা হয়নি। তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন।
হোমনা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেহানা বেগমের গাড়িচালক মো. শাহজালালের একটি টিনশেড দোকান রয়েছে হোমনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। রবিবার (১ মার্চ) রাতে হোমনা উপজেলা হকার্স লীগ সভাপতি মো. মমিন মুজিববর্ষের একটি ব্যানার টানাতে ওই দোকানের ওপরে ওঠেন। সে সময় দোকানের চাল ভেঙে যাওয়ার ভয়ে শাহজালাল বাধা দেন। মমিন এই ঘটনায় ইউএনও তাপ্তি চাকমার কাছে অভিযোগ দেন। পরে ইউএনও দুজনকে ডেকে এনে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এছাড়া মমিনের কাছে শাহজালাল ক্ষমা চান। এরপরও সংসদ সদস্যের অনুসারী কয়েকজন নেতাকর্মী মঙ্গলবার সকালে ইউএনওর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে সংসদ সদস্য বেলা ১টার দিকে উপজেলা সদরে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইউএনওকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) এ ঘটনায় ইউএনওকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সেলিমা আহমাদ মেরী। সেখানে তিনি ইউএনও তাপ্তি চাকমাকে ‘রাজাকার’ দাবি করেন। তিনি বলেন,‘হোমনা বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে এখনও রাজাকাররা আছে। আমার কাজ জনগণের সেবা করা। আমার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানে আমি আওয়াজ তুলবো। আমি যখন ইউনওকে ফোন করি তিনি দুটি কথা বলেছেন, যা আমি গ্রহণ করিনি। প্রথমত তিনি বলেছেন, “এটা ড্রাইভারের জায়গা, সেখানে সে (ড্রাইভার) ব্যানার লাগাতে নিষেধ করেছে।” আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের আকাশ,মাটি,এমন কোনও জায়গা নেই যে যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগানো যাবে না। আর ড্রাইভারের ওই জায়গাটাও তো পৌরসভার। দ্বিতীয় কথাটি ইউএনও বলেছেন, “তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।” আমি প্রশাসনকে ফোন করেছি। প্রশাসনকে বেতন দেয় সরকার। ইউএনও সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। সুতরাং এখানে ইউএনওর একটা বড় দায়িত্ব আছে। এ ব্যাপারে ডিসি সাহেবকেও বলেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্যের অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ইউএনও তাপ্তি চাকমা বলেন,‘একজন সংসদ সদস্য এত ছোট বিষয় নিয়ে এভাবে আমাকে হুমকি দেবেন, হোমনা ছাড়ার আল্টিমেটাম দেবেন তা ভাবতেও পারিনি। তিনি বলেছেন, আমি নাকি রাজাকার?’
ইউএনও আরও বলেন,‘আমি একজন বিচারক। অন্তত এতটুকু বুঝি, কাকে কখন কী অপরাধে সাজা দিতে হয়। সাজা কেন দিলাম না, এটাই আমার অপরাধ। বর্তমানে আমি ছুটিতে। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরে যা নির্দেশনা আসবে তাই করবো।’
তাপ্তি চাকমা দলীয় রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার কিনা জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেহানা বেগমের গাড়িচালকের সঙ্গে হকার্স লীগের নেতার সমস্যা হয়েছে। রেহানা বেগম উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তার সঙ্গে আমার কোনও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘ঘটনার দিনই জেলা ডিডিএলজি কর্মকর্তার সঙ্গে ওই নির্বাহী কর্মকর্তা হোমনা থেকে চলে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা একজন ইউএনওকে প্রশাসন হোমনা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে, না অন্য জায়গায় দেবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা ওই ইউএনওকে হোমনাবাসী আর চায় না।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনও তাপ্তি চাকমা এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। বুধবার (৪ মার্চ) সকালে তিনি হোমনা থেকে কুমিল্লায় চলে আসেন।
তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ‘ইউএনও তাপ্তি চাকমা ছুটিতে আছেন। আমরা তাকে প্রত্যাহার করিনি। প্রত্যাহার করতে যাবো কেন?’
এদিকে,হোমনায় ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) থেকে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া ভূঁইয়া।