বিজেপি সদস্য হয়েও বিদ্বেষের আগুন থেকে নিজের কারখানা বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন উসমানপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আতিক। ভারতের রাজধানী দিল্লির ব্রহ্মপুরি মণ্ডলের বিজেপি সংখ্যালঘু সেল-এর প্রধান তিনি। হিন্দুত্ববাদী হিংসার আগুনে পুড়ে গেছে তার কারখানাও। আতিকের আশা ছিল, বিজেপি নেতৃত্বের কাছে অন্তত সান্ত্বনা পাবেন। তবে ‘সংখ্যালঘু’ হওয়ার কারণেই তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
বিতর্কিত সিএএ আইনবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গত ২৩ ফেব্রুয়ানি (রবিবার) থেকে দিল্লির পূর্ব অংশে শুরু হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উসকানির পর হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয় সেখানকার মুসলিমদের। হতাহত হয় বহু মানুষ। কারাওয়াল নগরে অবস্থিত আতিকের কাপড়ের কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে।
আতিক জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে ভাড়া করা জায়গায় তিনি নিজের কারখানা চালু করেন। “দিল্লিতে সহিংসতা যেদিন বাড়তে শুরু করল, তার ঠিক আগের দিন আমি আমার কর্মীদের বলি যেন কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যায়। যখন আগুনের খবর আসে, আমি তখন বাড়িতে…কী যে অসহায় লাগছে,” বলছেন তিনি।
“এখনো বিজেপি ছাড়িনি, তবে আর কিছুদিনের মধ্যে যদি পার্টি আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে… আমি রাস্তায় এসে গেছি, নিজের পায়ে ফের দাঁড়াব কী করে?” প্রশ্ন মোহাম্মদ আতিকের। ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, “আমার প্রতিবেশী ফোন করে জানান আগুনের কথা। আমি নিজে এখনও ভয়ে কারখানায় যাইনি। কাছেই আমার ছোট ভাইয়ের কারখানাতেও আগুন দেওয়া হয়। আমি আশা করেছিলাম যে বিজেপির নেতারা অন্তত ফোন করবেন, সাহায্য করার কথা বলবেন, সান্ত্বনা দেবেন” ।
পাঁচ সন্তানের পিতা আতিক গত ১৬-১৭ বছর ধরে বিজেপির নিচুতলার কর্মী হিসেবে কাটিয়েছেন। তার কথায়, “আমাদের দিল্লির বিজেপি প্রধান মনোজ তিওয়ারির মতোই আমিও বিহারের লোক। উনি চেনেন আমাকে…কিন্তু আমার নামটা মুসলমান তো, তাই আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন।”
আতিক জানান, বিজেপি কর্মী হওয়া নিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিনি। “আমি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদির ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানে বিশ্বাস করেছিলাম, যারা বিজেপির সমালোচনা করত, তাদের সঙ্গে তর্ক করতাম। এখন ওরাই আমায় জিজ্ঞেস করছে, পার্টি আমার জন্য কী করেছে। আমার কাছে কোনও উত্তর নেই।”