মোদির সম্মাননা ফিরিয়ে দিলো ৮ বছরের জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মাননা ফিরিয়ে দিলো মনিপুরের ৮ বছরের জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট লিসিপ্রিয়া কাঙ্গুজাম। রবিবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একটি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এখবর জানিয়েছে।

শুক্রবার ভারতের সরকারি টুইটার অ্যাকাউন্টে ৮ বছরের লিসিপ্রিয়াকে অনুপ্রেরণাদায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, লিসিপ্রিয়া মনিপুরের একজন শিশু জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৯ সালে সে ড. এপিজে আব্দুল কালাম শিশু পুরস্কার, একটি বিশ্ব শিশু শান্তি পুরস্কার ও একটি ভারতীয় শান্তি পুরস্কার পেয়েছে।

সরকারের এই ঘোষণার পর গত বছর জুলাইয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ করা লিসিপ্রিয়া লিখেছে, প্রিয় নরেন্দ্র মোদি জি, দয়া করে আমার কথা যদি আপনি না শুনতে পান তাহলে আমাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হবেন না। আপনার উদ্যোগে দেশের একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নারী হিসেবে আমাকে চিহ্নিত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। অনেক ভেবে দেখার পর আপনার এই সম্মাননা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জয় হিন্দ!

পরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লিসিপ্রিয়া জানায়, সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া সম্মানের বিষয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকার তার কথা শুনতে চাইছে না।

তার কথায়, তাদের জন্য এটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে। কিন্তু নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের কথা ভাবলে আমার মনে হয় না এতে কোনও সমাধান আসবে। বিষয়টি আমার কাছে রঙ ফর্সা করার ক্রিমের মতো। একবার মুখ ধুয়ে ফেললে আর তা থাকে না। এর পরিবর্তে আমি চাই তিনি (মোদি) আমার কথা শুনুন এবং আমাদের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন।

#SheInspireUs শিরোনামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই প্রচারণা নারীদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। যাদের জীবন ও কর্ম লাখো নারীকে অনুপ্রেরণা দেবে। ৩ মার্চ এক টুইট পোস্টে মোদি লিখেছেন, এবারে নারী দিবসে, আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট সেই নারীদের দেওয়া হবে যাদের জীবন ও কর্ম আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।

লিসিপ্রিয়ার প্রত্যাশা, তার এই প্রত্যাখ্যানের পর সরকার তার উদ্বেগের বিষয়ে  মনোযোগী হবে। অ্যাক্টিভিস্টের ভাষায়, যখন আমি প্রথম খবর পাই বিশ্বাস করতে পারিনি। নিশ্চিত হওয়ার পর নিজেকে গর্বিত মনে হলেও খারাপ লাগা ছিল। আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, দাবি আদায়ে ক্রমাগত সরকারকে চাপ না দিয়ে এই স্বীকৃতি গ্রহণ করব কিনা। আমি মনে করি এই প্রত্যাখ্যানের ফলে সরকার আমার দাবি পূরণে মনোযোগী হবে। আমাকে আমার উদ্বেগ নিয়ে আলোচনার ডাকা বা আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমাদের নেতা ও রাজনীতিকরা কখনও জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেননি। এটিই সবচেয়ে দুঃখজনক।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় লিসিপ্রিয়ার দাবির মধ্যে রয়েছে কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে আইন প্রণয়ন, স্কুলের পাঠ্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা, বার্ষিক পরীক্ষায় পাস হতে হলে শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম দশটি বৃক্ষরোপন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

তার মতে, এই তিন নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। এগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে সহযোগিতা করবে এবং বিশ্বের ব্যবস্থা বদলাতেও ভূমিকা রাখবে।

‘ভারতের গ্রেটা’ বলে পরিচিতি পাওয়া এই মেয়ে জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ৪ জুলাই মঙ্গোলিয়াতে জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতাদের সামনে ভাষণ দিয়েছে সে। এরপর সে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে  ‘দ্য চাইল্ড মুভমেন্ট’ শুরু করে।  ২০১৯ সালের ২১ জুলাই পার্লামেন্টের প্রাঙ্গণে দীর্ঘ এক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের নজর পড়ে তার ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *