ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান ও নিজাম উদ্দিনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা) বাতিল করতে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (১১ মার্চ) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদন করা হয়।
আদালতে চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (সিসিবি ফাউন্ডেশন)-এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও সংস্থাটির পরিচালক অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এই আবেদন করেন।
আবেদনে তুলে ধরা কয়েকটি অভিযোগে বলা হয়েছে: একই সময়ের মধ্যে দুই জায়গায় (শিশুমেলা ও ফার্মগেট) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহার। একই সাক্ষীরা বারবার বিভিন্ন জায়গায় এসেছেন। এক ধারার অপরাধ দেখিয়ে ভিন্ন ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। চলন্ত ভ্যান থেকে কলা চুরির অপরাধে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে, যা ভ্রাম্যমাণ আদালত দিতে পারেন না। দণ্ডবিধির ৮৩ ধারা অনুযায়ী, ১২ বছরের নিচের শিশুদের সাজা দেওয়া যায় না। তবুও ৯, ১০ ও ১১ বছর বয়সী শিশুদের সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জোর করে শিশুদের স্বীকারোক্তি আদায়ের নজির রয়েছে, যা সংবিধানের ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
এর আগে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ডিত হয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২ বছরের কম বয়সীদের মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিশু আদালত ছাড়া অন্যান্য আদালতের অধীনে সাজাপ্রাপ্ত ১২ বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট তার আদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক শিশুদের দণ্ড দেওয়াকে অসাংবিধানিক, অবৈধ এবং বাতিল বলে ঘোষণা করেন। এছাড়া শিশুদের মধ্যে যাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ড দিয়েছেন, তাদের দ্রুত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা হাজত থেকে ছেড়ে দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক পরিচালিত শিশুদের দণ্ডপ্রদানের বিষয়টি শিশু আইন এবং দণ্ডবিধির বিধিবহির্ভূত হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ড কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েও আদালত রুল জারি করেন। সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এসব রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। ওই প্রতিবেদনে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক ১২১ জন শিশুকে সাজা দিয়ে তাদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর তথ্য উল্লেখ করা হয়।