বাংলাদেশে উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র বিক্রিতে আগ্রহী ইউরোপের দেশগুলো

মিলিটারি ফোর্সেস গোল ২০৩০ ভিশন অর্জনের জন্য সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্র কেনার জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের রাজনৈতিক নেতারাও ঢাকা সফর করছেন। সর্বশেষ গত সোমবার (মার্চ ৯) ঢাকা সফরে আসেন ফ্রান্সের সামরিক মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলি। এর আগে গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি র‍্যাইন্ডল জি শ্রাইভার ঢাকা সফর করেন। কারণ, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চ প্রযুক্তির হেলিকপ্টার কিনতে আগ্রহী। বিক্রেতা এসব দেশ উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জোট হিসেবে যুক্তরাজ্য-জার্মানি-স্পেন-ইতালি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য অবসরে যাওয়া পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ‘একটি দেশ যখন উন্নত হয় তখন সব বিষয়ে একই সঙ্গে সমন্বিতভাবে অগ্রসর হতে চায়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামরিক সক্ষমতাসহ সব বিষয়েই উন্নতি হয়ে থাকে। কারণ, এটি একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি জড়িত।  সম্পূর্ণভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া হবে বা একটার পরে আরেকটি হবে, বিষয়টি এরকম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসন, অবকাঠামো তৈরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণসহ সবদিক থেকে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে এবং সামরিক সক্ষমতা এদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে পারে না। শুধু তা-ই না, পদ্মা ব্রিজের মতো বৃহৎ প্রকল্পও বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে করছে।’

তিনি বলেন, ‘সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা আছে। আমরা যেসব অস্ত্র কিনি তার একটি বড় অংশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে ব্যবহার করা হয়।’

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি চীনের কাছ থেকে কেনে, যা দামে তুলনামূলক কম। এর বিপরীতে উন্নত বিশ্বের পণ্যের মান ভালো, কিন্তু দাম বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল বলেন, ‘শুধুমাত্র দামের বিবেচনায় অস্ত্র কেনা হয় না। এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত থাকে।’

কী কী বিষয় জড়িত থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বাংলাদেশে ওই অস্ত্র কার্যকর কিনা, জাতিসংঘের কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা, দাম, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ আরও অনেক বিষয়।’

ভূ-রাজনীতি অস্ত্র ক্রয়ে কী ভূমিকা রাখে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়ই ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব রাখে। আমরা চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ অন্যান্য অনেক দেশ থেকে অস্ত্র কিনে থাকি।’

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপরি) গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। এরমধ্যে চীনের কাছ থেকে কিনেছে ২৬০ কোটি ডলারের। এরপরে রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এবং এদের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৪৫ কোটি ও ১১ কোটি ডলার।

ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৬ কোটি ডলার মূল্যের জাহাজ, ৯৪ কোটি ডলারের সাজোঁয়া যান, প্রায় ৬০ কোটি ডলারের বিমান ও ২১ কোটি ডলারের মিসাইল কিনেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *