বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে দুজন রোগী মারা যাওয়ার পরে এবং আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গেলেও দেশের বর্তমান অবস্থাকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর্যায় বলতে রাজি নয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। রবিবার (২২ মার্চ) কোভিড-১৯ এর বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার জন্য আরেকটু সময় নিচ্ছি। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়, মিরপুরের টোলারবাগে যে রোগীকে করোনা আক্রান্ত বলে জানানোর পর তিনি মারা গেলেন তিনি কোনও প্রবাসী বা বিদেশির সংস্পর্শে আসেননি। তাহলে তার ক্ষেত্রে সোর্স অব ইনফেকশন কী? সেক্ষেত্রে কি বলা যাবে দেশে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার জন্য আরেকটু সময় নিচ্ছি। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। যেমন—আপনারা যে রোগীর কথা বলছেন (টোলারবাগে মৃত রোগী) তার ক্ষেত্রে আমরা তাদের পাশে বিদেশ থেকে এসেছেন এমন দুই ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি। আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছি। আমরা দেখতে চাই তাদের সংক্রমণ ছিল কিনা, ওই ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ এদের কাছ থেকে এসেছে কিনা। তাদের একজনের ক্ষেত্রে আমরা সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা এক্সটেনসিভভাবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করছি। অন্যজনেরও করছি। অন্যক্ষেত্রে আমরা যেমন কন্টাক্টফেসিং করি, লক্ষণ উপসর্গ হওয়ার চারদিন আগে থেকে করি। ১৪ দিন আগে থেকে লক্ষণ উপসর্গ হয়, তাই এখানে ১৪ দিন আগে থেকে করছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমরা চাই যে সোর্স অব ইনফেকশন কন্টাক্ট তাকে আইডেন্টিফাই করতে। কারণ, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টা হচ্ছে যখন সোর্স অব ইনফেকশন আইডেন্টিফাই করতে পারছি না। সোর্স অব ইনফেকশনটা আইডেন্টিফাই করতে পারলে পরবর্তী সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা যাবে। সেজন্য আমরা তাদের ১৪ দিন পেছনে গিয়ে তাদের সমস্ত তথ্য নিচ্ছি। এমনকি বিভিন্ন দফতরে তারা যেখানে গেছেন সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যন্ত আমরা সংগ্রহ করেছি। অবজারভ করছি সেখানে সংক্রমণ হতে পারে এরকম কেউ আছে কিনা। এখন আমাদের সব তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়নি। আমরা তথ্য যখন পেয়ে যাবো তখন যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয় সেটাও আপনাদের জানাবো। আর যদি তা না হয়, সেটাও আপনাদের জানাবো।
সেটা কতদিন নাগাদ হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো করার। অনেক ক্ষেত্রে হয় যে যাকে আমরা আইডেন্টিফাই করলাম তাকে পেলাম না, সে রকম বিষয়ও থাকে। একেকজনের ক্ষেত্রে ১০০-এর বেশিও কন্টাক্ট থাকে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে মিসিং কন্টাক্ট থাকে। এ বিষয়ে স্পেসিফিক টাইম বলাটা খুব মুশকিল। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যাবে আমরা তথ্য নিতে থাকবো। যখন দেখবো এটা রেডি হয়ে গেছে, আমরা তখন জানাবো।
কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টা অস্বীকার করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আমাদের জন্য একটা পরবর্তী লেভেল, যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত না হবো ততক্ষণ আমরা এটা বলবো না। আমরা সাফিশিয়েন্ট এভিডেন্স পাওয়ার পরেই বলবো। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আমাদের রিপোর্টটা দিতে হবে। তথ্য প্রমাণ ছাড়া তাদের রিপোর্ট দিতে পারবো না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের কাছে জানতে চাইবে, আপনারা কী পরিমাণ অনুসন্ধান করেছেন যে বলে দিলেন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে আমরা সোর্স অব ইনফেকশন পাইনি। তারপরেই বলবো ট্রান্সমিশন। এটা স্বীকার অস্বীকারের বিষয় না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি হলেই আমরা পরীক্ষা করি। এ পর্যন্ত আমরা ৪০ জন নিউমোনিয়া রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছি। কোনও সংক্রমণ পাইনি।
পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সিঙ্গাপুরের যে রোগী এসেছেন তিনি এখনও সেরকমই আছেন। আইসিইউতে আছেন। তার অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আর অন্য জায়গায় অনেক বেশি রোগী চিহ্নিত হয়েছে। তবে বিস্তারিত তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। আমি পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেবো।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ৪০ জন।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সরকার ভেন্টিলেশন সাপোর্ট চালু রেখেছে। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে এই সাপোর্ট চালু রাখা হয়েছে। আরও কিছু হাসপাতালে এই সাপোর্ট চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
করোনা আক্রান্ত দুই রোগী প্রসঙ্গে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যে দুজন রোগী মারা গেছেন তারা আগে থেকেই অন্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়েই তারা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সঙ্গে শ্বাসকষ্টও ছিল। জ্বর ছিল। সেসব লক্ষণের কারণে তাদের টেস্ট আমরা নিয়েছি। পরীক্ষায় তারা পজিটিভ প্রমাণিত হয়েছেন।
শনিবারে করোনায় মারা যাওয়া রোগী সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনারা আরেক রোগীর কথা বলছেন, তার নমুনা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। কিন্তু, যখনই আমরা সাসপেক্ট করি, তখনই করোনা ধরে নিয়েই আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নেই। মৃত ওই রোগীর সৎকার করার ক্ষেত্রে করোনা রোগীর যেভাবে সৎকার করা হয় সেভাবেই করা হয়েছে। তবে তার নমুনা পরীক্ষার ফল এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।
আগের পাওয়া রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা এবং তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এখানে স্বীকার অস্বীকার করার কোনও বিষয় নেই। এখানে এভিডেন্স যা বলবে আমরা তাই বলবো। আমরা কী করেছি না করেছি তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সেদিনই তার নমুনা আনা হয়েছে, পরীক্ষা করা হয়েছে। এবং তিনি আমাদেরই পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এবং তিনি মারা যাওয়ার পরে আমাদের ফুল টিম তার পাশে থেকে সৎকার কাজে সহযোগিতা করেছে। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না।
আগে যাদের লক্ষণ উপসর্গ দেখে এবং বিদেশ থেকে আসা দেখে আমরা লক্ষণ উপসর্গ যাচাই করতাম এখন আমরা সেটা করছি না। এখন বিদেশ থেকে আসা দেখেই আমরা নমুনা সংগ্রহ করছি না। আমাদের কাছে যাদের স্ট্রংলি সাসপেক্টেড মনে হয় তখনই আমরা তার নমুনা সংগ্রহ করি।
তিনি জানান, বিভিন্ন বাসা ও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ৬৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি, যেটা একসময় ২/৩ জন ছিল।
কী পরিমাণ কিট মজুত আছে সে সম্পর্কে আইইডিসিআরের আরেক পরিচালক বলেন, বর্তমানে আমাদের হাতে দেড় হাজারের বেশি কিট আছে। ২০ হাজার কিট সিঙ্গাপুর থেকে ওয়ার্ক অর্ডার নেওয়া হয়েছে। আরও ৩০ হাজার আসবে।