করোনাভাইরাস মহামারিতে সারাদেশের মানুষ আতঙ্কিত। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না।’ আজ বুধবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব বলেন।
শেখ হাসিনার আহ্বান, ‘যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোনও ভোগ্যপণ্য কিনবেন না। মজুদ করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাজারে কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। সর্বত্র বাজার মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। তার কথায়, ‘এ সংকটময় সময়ে আমাদের সহনশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে।’
সরকার প্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি মিল মালিকদের কাছে এবং কৃষকদের ঘরে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ আছে। চলতি মওসুমে আলু-পিয়াজ-মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।’
কৃষকদের প্রতি শেখ হাসিনার অনুরোধ, ‘কোনও জমি ফেলে রাখবেন না। আরও বেশি বেশি ফসল ফলান।’
উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যশস্য, শাক-সবজি-মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ঢাকায় মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দোরগোড়ায় এখন আমরা। মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে। গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।’
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু কন্যা উল্লেখ করেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপরও এই আঘাত আসতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। আমরা জনগণের সরকার। সবসময়ই আমরা জনগণের পাশে আছি। আমি নিজে সর্বক্ষণ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বেতার-টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসহ সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করেছে সরকার। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রশাসনের সদস্যদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে একযোগে কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।