ঢাকায় করোনায় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে একই হাসপাতালে থাকা একজনের খুলনায় মৃত্যু

ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে একই হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন খুলনার মোস্তাহিদুর রহমান (৪৫)। পরে তাকে খুলনায় আনা হয়। ভর্তি করা হয় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তিনি খুলনা মহানগরীর হেলাতলা এলাকার মৃত সাঈদুর রহমানের ছেলে।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মোস্তাহিদুর রহমান থাইরয়েড সার্জারির জন্য ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া একজন। এরপর ওই হাসপাতাল থেকে সব রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে নিজ নিজ বাসায় সবাইকে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু মোস্তাহিদুর রহমান খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে বুধবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ভর্তির সময় এসব তথ্য গোপন করেন।

ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ আরও জানান, থাইরয়েড সার্জারিতে ইনফেকশন হওয়ার কারণে এখানে আসেন তিনি। তাই তাকে স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-২-এ ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন এসব তথ্য প্রকাশ পায়। এরপর ওই রোগীকে ফাঁকা ওয়ার্ডের এক কোণে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু দুপুর দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। তার লাশ হাসপাতালেই রয়েছে।

ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা সেবায় থাকা ১৬ জনকে এ ঘটনার পরই কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পেছনে থাকা ডরমেটরিতে তাদের পৃথক পৃথক রুমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন ডাক্তার, ১০ জন নার্স ও ২ কর্মচারী রয়েছেন।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ইনচার্জ ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ওই ব্যক্তি তথ্য গোপন না করলে তাকে করোনা ইউনিটেই নেওয়া হতো। তথ্য গোপন করার কারণে তাকে সার্জারিতে নেওয়া হয়। তার মৃত্যুর পর এখানে থাকা ৩০ ভাগ রোগীও হাসপাতাল ত্যাগ করতে শুরু করেছেন।

অনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নাজিয়া হক অনি জানান, আইসিইউর সবাই কোয়ারেন্টিনে যাবার পর ওই রোগী খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকায় এই হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তির পাশেই ছিলেন খুলনার ওই ব্যক্তি। করোনা পজিটিভ কিনা নিশ্চিত নই, তবে হাই পসিবিলিটি রয়েছে।

এদিকে, খুলনা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম খুলনা এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় যশোর থেকে তারা খুলনায় এসে পৌঁছেছেন। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের ঢাকার টিমটি আগে থেকে যশোর অবস্থান করছিল। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের খবর পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মোস্তাহিদুর রহমানের মরদেহ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হবে। রিপোর্ট পাওয়ার পর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *