পর্যটকদের কোলাহল না থাকায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এক সপ্তাহ আগে একদল ডলফিনের দেখা মেলে বলে অনেকেই জানান। সাগর উপকূল থেকে কিছুটা দূরত্বে এসব ডলফিন খেলা করছিল। কিন্তু হঠাৎ কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে সেগুলো। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, ডলফিনের দলটিকে এক সপ্তাহ আগে কিছুক্ষণের জন্য দেখা গেলেও আর কোথাও এদের দেখা মেলেনি। তবে মাঝেমধ্যে গভীর সাগরে কিছু ডলফিন দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজারের সোনাদিয়া ও মহেশখালী চ্যানেলে কিছু ডলফিন বসবাস করে। সেগুলোই পরিচ্ছন্ন পানি পেয়ে কলাতলী পর্যন্ত ঘুরে আবার আগের জায়গায় হয়তো ফিরে গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ডলফিনের দেখা মেলে। ১০ থেকে ১২টি ডলফিনের এই দলটি উপকূলের একদম কাছে চলে আসে। এসময় উপস্থিত স্থানীয়রা পাড় থেকেই ডলফিনের খেলা উপভোগ করেন। একপর্যায়ে কলাতলীতে অবস্থানরত সাইমন বিচ রিসোর্টের এমডি মাহবুব রহমান রুহেল কৌতূহলবশত স্থানীয় সার্ফারদের সঙ্গে নিয়ে সাগরে নেমে পড়েন এবং কিছু ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
সাইমন বিচ রিসোর্টের এমডি মাহবুব রহমান রুহেল জানান, ‘ছোটবেলা থেকে বেশিরভাগ সময় কক্সবাজার কাটিয়েছি। কিন্তু সমুদ্রে এত কাছে ডলফিন আর কখনও দেখিনি। গত ২৩ মার্চ আমার রিসোর্টের জিএম আমাকে উপকূলের কাছে ডলফিন দেখা যাওয়ার বিষয়টি জানায়। এরপর আমি ছোট কায়াক (ছোট ডিঙ্গি নৌকার মতো) নিয়ে সাগরে নেমে পড়ি। প্রথমে আমি একটি ডলফিন মনে করেছিলাম। পরে দেখি অনেক ডলফিন। তখন আমার পকেটে মোবাইল ছিল। এই মোবাইল দিয়ে আমি ভিডিও করি।’ ভিডিওটি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
মাহবুব রহমান রুহেল আরও জানান, ‘আমি যখন সাগরে ডলফিনের কাছাকাছি চলে যাই, তখন ডলফিনের দলটি আমার কাছে এসে ঘোরাঘুরি করছিল। সত্যি বিষয়টি একদম স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে আমার।’
তিনি ধারণা করছেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা জনশূন্য। তাই প্রকৃতির এই নির্জনতার সুযোগে ডলফিনের দলটি একদম উপকূলের কাছাকাছি চলে আসে।
উখিয়ার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার স্থানীয় জেলে সোনারপাড়া এলাকার নুরুল কবির জানান, সাগরে মাছ ধরতে গেলে গভীর সাগরে মাঝেমধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের দেখা মেলে। বিশেষ করে শীত মৌসুমের শেষের দিকে এসব ডলফিনের দল সাগরে ঘুরে বেড়ায়। তবে গত দুই/তিন বছর আগেও একবার এসব ডলফিন সাগর উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে দেখা গিয়েছিল। তবে এটা অহরহ ঘটে এমন না।
রামু পেঁচারদ্বীপ এলাকার জেলে খাইরুল আলম জানান, ‘সাগরে ডলফিন নতুন কিছু নয়। তবে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসায় স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল জমেছে। গত বছরও হিমছড়ি এলাকায় সাগর উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে দেখেছি ডলফিন। সাগরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানিতে ডলফিনের দল সাঁতরে বেড়ায়।’
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘কক্সবাজারের সোনাদিয়া ও মহেশখালী বঙ্গোপসাগর চ্যানেলে দুটি ডলফিন পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। একেকটি পরিবারে ১০/১২টির বেশি ডলফিন থাকে। সাগরে মূলত তারা দল বেঁধে চলাফেরা করে। বর্তমানে চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত তাদের দেখা মেলে। যেহেতু তারা নিরিবিলি পছন্দ করে, সেহেতু সাগরের জনমানবহীন নীরবতার সুযোগে সাগরের কলাতলী পয়েন্টে চলে এসেছে হয়তো।’
তিনি বলেন, ‘ডলফিন সাগরে মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গা পছন্দ করে। বর্তমান সময়ে বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন এলাকা হচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপ। যদি ওই এলাকাগুলো দূষিত হয়ে যায়, তাহলে তারা অন্যত্র চলে যেতে পারে। তাই সাগরের দূষণ রোধ কমাতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাগরের দূষণ কমাতে পারলে ধীরে ধীরে ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে মনে করি।’