করোনা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আমরা চিন্তিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন ভালোভাবে সংরক্ষিত হয় সেটা দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যদি কোনোরকম কিছু হয়ে যায়, তাহলে খুবই ক্ষতি হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহিরাগত কারও প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে বাইরের কারও যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী সবাই আছে তারা কাজ করছে। আমাদের যারা আছে তারাই সেবা দেবে। বাইরের কেউ যেন সেখানে না যায় তার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠ প্রশাসনের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে দেশের ৬৪ জেলা ও ৮ বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। এছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রীও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
ভিডিও কনফারেন্সকালে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার ছাড়াও মাদারীপুর, গাইবান্ধা, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, লালমনিরহাট ও বরগুনা জেলা এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিয় করেন।
মাদারীপুর জেলার সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনসচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের পিপিই’র কোনও সংকট নেই। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। কোনও ধরনের গুজব কেউ যাতে না ছড়াতে পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক আছি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে সচেতন করা জনগণকে সম্পৃক্ত রাখা সবচেয়ে বেশি দরকার। জনগণকে বুঝাতে হবে নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকেও সুরক্ষিত থাকতে হবে।’
গাইবান্ধা জেলার সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দাফন নিয়ে কেউ কেউ ভয় পাচ্ছে। আসলে দাফনের কাপড় নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও বিষয় নেই। যারা ভাইরাস আক্রান্ত নয়, তাদের নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
চুয়াডাঙ্গায় মতবিনমিয়ে সবার পিপিই দরকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পিপিই সবার জন্য নয়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা যে করবে, তার জন্য প্রয়োজন। এটা যথেচ্ছা ব্যবহারের জন্য নয়। আর পিপিই ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের আইইডিসিআর একটি ব্যবস্থা নিতে পারে। এগুলোর ছবি দিয়ে পোস্টার করে দেওয়া বা মিডিয়াতেও দেওয়া, কোন অবস্থায় কোনটা কে ব্যবহার করবে— এটা প্রচার হওয়া দরকার। কেউ মনে করলে একটা গাউন বানিয়ে তা ব্যবহার করতে পারি। এটা বারবার ব্যবহার করা যাবে।’
পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সব থেকে ভালো সুরক্ষা। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অনেকে দেখি সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরপরই স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। আসলে মাইন্ড সেটআপ এরকম হয়ে গেছে। মনে হয় মানুষ একটু নার্ভাস হয়ে গেলে এরকম করে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের বিরুদ্ধে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ব্যাখ্যা দিতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘যারা এগুলো করার করবে। আমি ওদের কথায় পাত্তা দিই না, দেবো না। এগুলো এখানে কোনও পুনরাবৃত্তির দরকার নেই। আমাদের দেশে কিছু লোক আছে যেকোনও ঘটনা হোক, ঢোল নিয়ে নেমে পড়ে। নিজেদের কথার ফুলঝুরি ঝরায়ে নিজেরা কিছুই পারে না করে না। তারা কে কী বললো এটা চিন্তার কিছু নেই। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আপনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করার জন্য যেটা করার তা করেন।’