করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন সেটা আমাদের প্রচণ্ড হতাশ করেছে। এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যেমন নেওয়া হয়নি, তেমন প্রকৃত সত্য আড়াল করে প্রণোদনার পরিমাণও অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে।
রোববার (৫ এপ্রিল) করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক ভিডিওবার্তায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না একথা বলেন।
মান্না বলেন, বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরে ৩০ হাজার কোটি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময়েই ব্যাংকের ঋণ পাবে, ঋণ দেওয়াই ব্যাংকের ব্যবসা। এটা কোনোভাবেই প্রণোদনা হতে পারে না।
তিনি বলেন, বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরে ঋণের সুদের ৯ শতাংশের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণের সুদের ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দেবে। প্রণোদনা বললে এটুকুকেই শুধু বলা যেতে পারে। প্রথমত এই ঋণের পুরোটাও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পৌঁছাবে কিনা অনিশ্চিত। এমনকি সেটা পুরোটা পৌঁছালেও এর পরিমাণ দাঁড়াবে ২৫শ কোটি টাকারও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এই ফান্ডে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার (১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা) যুক্ত করা হচ্ছে, এতে মোট ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার। এতে সুদের হার ২ দশমিক ৭৩ থেকে ২ শতাংশে নামানো হয়েছে। ০.৭৩ শতাংশ সুদ কমানোই এই ক্ষেত্রে প্রণোদনা।
প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম বিষয়ে মান্না বলেন, এই নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার টাকার নতুন ঋণ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। যাতে সুদের হার হবে ৭ শতাংশ। বাজারে প্রচলিত সুদের চেয়ে যে হার ২ শতাংশ কম। এই ২ শতাংশ কম সুদই প্রণোদনা। পুরো ঋণ যদি বিতরণ করা হয়, তাহলে এক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, অঘোষিত লকডাউনের কারণে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ তো বটেই, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তসহ ৮ থেকে ১০ কোটি মানুষের জন্য ন্যূনতম কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। এর মধ্যেই মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অভাবী মানুষরা বসে আছে একটু খাবার পাবে এই আশায়।
উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিলেও এই দক্ষিণ এশিয়াতে করোনা মোকাবিলায় সরকারগুলো যে ফান্ডের ঘোষণা করেছে সেগুলোতে এরকম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নগদ অর্থ সাহায্য এবং বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে খাদ্য সাহায্য দেওয়া, কয়েক মাসের জন্য বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ ইউটিলিটি বিল মওকুফ করা কিংবা রেয়াত দেওয়া, প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্যে ভর্তুকি দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, করোনা বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো না নিয়ে সরকার এই দেশের কোটি কোটি মানুষকে জীবন হারানোর মতো ভয়াবহ বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।