করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন যশোরের চৌগাছার চাঁদপাড়া গ্রামবাসী। তারা গ্রামের কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর তালিকা করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কেউ যাতে গ্রামের বাইরে না যান, কিংবা গ্রামে যেন কেউ ঢুকতে না পারেন, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপাড়া চৌগাছা উপজেলার বড় একটি গ্রাম। নারায়ণপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রামটিতে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসবাস। তিন হাজারের ওপরে রয়েছে ভোটার। গ্রামের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যেই ২৯১ জন কর্মহীন হয়ে পড়া অসচ্ছল পরিবারে ১৫ কেজি চাল, ২ কেজি গোল আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি সয়াবিন তেল, একটি সাবান, ৫০০ গ্রাম লবণ ও ৫০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
করোনাকালে পরিস্থিতি সামলাতে কর্মহীন তিনশ’ পরিবারের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে গ্রামের বাসিন্দা ও নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মুকুলকে সভাপতি ও চৌগাছা প্রেসক্লাবের সম্পাদক প্রভাষক অমেদুল ইসলামকে সম্পাদক করে ২১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি-ই গ্রামের কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো দেখছেন।
ভাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন গ্রামের নিজাম উদ্দিন। ছেলে রাহুল, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার তার। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে ছেলেসহ ঘরেই আছেন। তিনি জানালেন, ‘আমার মতো গ্রামের অন্য যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন কমিটির নেতারা। এখন সবাই ঘরে আছি। ঘরে থেকে সবাই এই বিপদ থেকে মুক্তি পাক এই কামনা করি।’
কমিটির সম্পাদক ও চৌগাছা প্রেসক্লাবের সম্পাদক প্রভাষক অমেদুল ইসলাম বলেছেন, ‘চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রবাসী সবাই মিলে গ্রামের প্রায় তিনশ’ পরিবারের ১০দিনের খাদ্য-সামগ্রী সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী তালিকা করে ৫ এপ্রিলের মধ্যেই আমরা বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। গ্রামে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে প্রায় তিনশ’ পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দশদিন আমাদের গ্রামে বাইরের কোনও মানুষও প্রবেশ করতে পারবে না। গ্রামের কোনও মানুষও বাইরে যাবেন না। সে অনুযায়ী গ্রামের পাঁচটি প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে গ্রামের বাইরে গেলে তাকে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে গ্রামে প্রবেশ করতে হবে।’
চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মুস্তানিছুর রহমান এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি নিজে গিয়ে তাদের কার্যক্রম দেখে এসেছি। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। গত ৪ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে উপজেলার অন্যান্য গ্রামে এ ব্যবস্থা করা যায় কি না -এমন প্রস্তাব রেখেছি। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দেখি, কী করা যায়। ’