দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এই পর্যন্ত মোট ২১টি জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সর্বশেষ ৮ এপ্রিলে নতুন করে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। গত ৩১ দিনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২১৮ জন। মৃত্যুর হয়েছে ২০ জনের। পর্যাক্রমে কমিউনিটি লেভেলে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, লোকাল ট্রান্সমিশন আগেই হয়েছে। এখন এলাকাভিত্তিক কমিউনিটি ট্রান্সমিশন দ্রুত ছড়াচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় অর্ধশতাধিক এলাকায় সবচেয়ে বেশি ১২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। তারপরে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে জেলায় পরেই মাদারীপুর জেলায় ১১ জন, ঢাকার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর গাইবান্ধা জেলায় ৫ জন, মানিকগঞ্জে ও চট্টগ্রামে করে তিনজন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। জামালপুর, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, নরসিংদী জেলায় দুইজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার, কিশোরগঞ্জ, মৌলভিবাজার, নীলফামারী চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, রাজবাড়ি, শরিয়তপুর, শেরপুর, সিলেট, গাজীপুর জেলায় একজন করে রোগী আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব এলাকায় ক্লাস্টার ভুক্তভাবে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তারমধ্যে রাজধানী মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, মিরপুর ও বাসাবো। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা ঝুঁকিতে আছে। তবে যেসব এলাকায় এখন এক-দু’জন করে রোগী শনাক্ত হচ্ছে সেসব এলাকায় এখনই সর্তকতা অবলম্বন (লকডাউন) না করলে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সারাদেশে পাঁচটি ক্লাস্টার পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ঢাকায় দু’টির মধ্যে একটি টোলারবাগে, অন্যটি বাসাবোতে। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় একটি, মাদারীপুরে একটি, গাইবান্ধা এলাকায় একটি ক্লাস্টার পাওয়া গেছে। ক্লাস্টার ভিত্তিতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশফেরত মানুষের মাধ্যমেই দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। গত কয়েক মাসে বিদেশ থেকে দেশে ৯ লাখ মানুষ এসেছে। এদের মধ্যে ১৬ জন আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। বিদেশফেরত আক্রান্তদের মধ্যে ইতালির ৬ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩ জন, সৌদি আরবের ২ জন। এছাড়াও কুয়েত, বাহারাইন, ভারত, জার্মানি ও ফ্রান্সের একজন করে রয়েছে। এরা ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে দেশে আসে। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোয়ারেন্টিনের শর্তগুলো কঠোরভাবে মেনে করোনা মোকাবিলায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৩৩ জন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৮১টি। মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৫১৬৫টি।