১৬ জেলা লকডাউন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবং জনগণকে নিরাপদে রাখতে দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিনই লকডাউন ঘোষিত জেলার সংখ্যা বাড়ছে। কোনও কোনও জেলায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে এক বা একাধিক উপেজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। লকডাউন ঘোষিত জেলাগুলোতে অন্য জেলা থেকে লোকজনের আসা যাওয়া এবং জেলার আভ্যন্তরীণ চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো জেলা লকডাউন হলো তার কোনও তথ্য সকারের কাছে নেই বলে জানান জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। তিনি বলেন, ’জনস্বার্থ বিবেচনায় জেলা প্রশাসন স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে লকডাউন ঘোষণা করতে পারেন। এর জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনুমতি প্রয়োজন হয় না।’

গাজীপুর

গাজীপুর জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন (অবরুদ্ধ) করা হয়েছে। শনিবার (১১ এপ্রিল) থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলা ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত সভায় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম গাজীপুর জেলাকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ঘোষণা করেন। বিভিন্ন জেলা থেকে পার্শ্ববর্তী জেলায় যাওয়ার জন্য ট্রানজিট হিসেবে জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহার ছাড়া উপজেলার যেকোনও সীমানা দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নৌপথেও এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

সিলেট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সিলেট জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। শনিবার (১১ এপ্রিল) বিকালে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী এম. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রামণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এখন সিলেট থেকে কেউ অন্য জেলায় যেতে পারবেন না এবং অন্য জেলা থেকে কেউ সিলেটে প্রবেশ করতে পারবেন না। এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলাতেও প্রবেশ করা যাবে না।

ঠাকুরগাঁও

তিন করোনা রোগী শনাক্তের পর শনিবার (১১ এপ্রিল) থেকে ঠাকুরগাঁও জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় সাত জন করোনা শনাক্ত এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক হায়ত-উদ-দৌলা খান। শনিবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে লকডাউন কার্যকর হয়।

রাজবাড়ী

রাজবাড়ীতে পাঁচ জন করোনা রোগে শনাক্ত হওয়ার পর এর বিস্তার রোধে আগামী ১০ দিনের জন্য জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিট্রেট দিলসাদ বেগম। শনিবার ১১ এপ্রিল দুপুরে তিনি একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

নোয়াখালী

আজ  শনিবার (১১ এপ্রিল) থেকে নোয়াখালী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এবং করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তন্ময় দাস শুক্রবার (১০ এপ্রিল) বিকালে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান।

কুমিল্লা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কুমিল্লা জেলাকে লকডাউন করেছে প্রশাসন। সেইসঙ্গে জেলায় প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফজল মীর এ কথা জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল জেলা লকডাউন চলছে গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) থেকে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম লকডাউনের ঘোষণা দেন।

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলাকে গত বুধবার (৮ এপ্রিল) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল)আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। আইএসপিআর জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ৮ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হলো। তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন—চিকিৎসা, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে বলে জানায় আইএসপিআর।

জামালপুর

জামালপুর জেলাকে গত  বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সকাল ৬ টা থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে বলে বুধবার (৮ এপ্রিল) রাতে ৮ টায় ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।

কিশোরগঞ্জ

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) থেকে কিশোরগঞ্জ জেলঅকে লকডাউন করেছে জেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত এ জেলায় ১০ জন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন মুজিবর রহমান। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মোর্শেদ চৌধুরী।

নরসিংদী

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) থেকে নরসিংদী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। জেলা প্রশাসক ও দেশের অভ্যন্তরে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এই ঘোষণা দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার

কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকালে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন লকডাউন ঘোষণা করেন। ফলে কেউ কক্সবাজারে প্রবেশ করতে এবং বের হতে পারবেন না। লকডাউন আদেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গাইবান্ধা

গাইবান্ধা জেলায় লকডাউন চলছে। শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে অনিদিষ্টকালের লকডাউন শুরু হয়। জেলাজুড়েই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

চাঁদপুর

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা জেলাকে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলায় সব ধরনের যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্যও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আংশিক লকডাউন যেসব জেলায়-

বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও রুমা উপজেলাকে  লকডাউন ঘোষণা করেছে  জেলা প্রশাসন। এছাড়া জেলা সদরেও চলছে অঘোষিত লকডাউন। তবে এখন পর্যন্ত জেলায় কোনও করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। গত ২৪মার্চ সন্ধ্যা থেকে এ লকডাউন ঘোষণা করা হয় বলে জানান বান্দরবান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামীম হোসেন।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভা লকডাউন ছাড়াও সিংগাইর উপজেলার জার্মিতা ইউনিয়ন লগ ডাউন করা হয়েছে। সেইসাথে শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের আটটি গ্রাম লগডাউন করা হয়েছে।  অপরদিকে হরিরামপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এর কয়েকটি বাড়ি আওতায় আনা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জে তিন উপজেলায় আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৭টি ওয়ার্ড লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে শনিবার দুপুরে লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব ইউনিয়ন হলো- খোকশাবাড়ী, ছোনগাছা, রতনকান্দি, সয়দাবাদ, মেছড়া ও কাওয়াকোলা। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন শনিবার বিকালে ১৭টি ওয়ার্ডে লকডাউনের বিষয় নিশ্চিত করেন। এর আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে পৃথকভাবে কাজিপুর উপজেলার ছয়টি এবং শাহজাদপুর উপজেলার ছয়টিসহ ১২ ইউনিয়ন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সামাজিক দূরত্ব অধিকতর নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খুলনা জেলায় সব ধরনের যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।তবে এটাকে লকডাউন বলছে না জেলা প্রশাসন।

সাতক্ষীরার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সব জেলার সীমান্ত এবং আন্তঃউপজেলা সীমান্তে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোস্তফা কামালের দফতর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস নোটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস (কোভিট-১৯) সংক্রমিত সব জেলার ব্যক্তি ও পরিবহন প্রবেশে কুষ্টিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আ

নীলফামারীতে সব ধরনের যানবাহন যাতায়ত (প্রবেশ ও বর্হিগমন)  অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে ওই গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন যা শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকাল থেকে কার্যকর হয়। এর অংশ হিসেবে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে বিশেষ চেকপোস্ট ও বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলাকে বুধবার থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বরিশালে প্রবেশ ও ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঘরের বাইরে বের হওয়াসহ যানচলাচলের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ উল্লেখ করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি লকডাউন না। মানুষের চলাচলের ওপর একটি নিয়ন্ত্রণ বা বিধি নিষেধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *