লকডাউনের মধ্যেই রাজধানীতে ডাকাতি-ছিনতাই করে বেড়াচ্ছিল ওরা

দলে ওরা ১২ থেকে ১৫ জন। পেশাদার ডাকাত ও ছিনতাইকারী। আগে থেকেই ডাকাতি ও ছিনতাই করে বেড়াতো ওরা। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকা ফাঁকা ঢাকা যেন আরও বেশি ‘আশীর্বাদ’ হয়ে আসে ওদের জন্য। প্রতিরাতে দুটি ছোট ট্রাক নিয়ে বের হতো ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। ফাঁকা রাজধানীতে সড়কে থাকা জরুরি কাজে বের হওয়া লোকজন ছিল তাদের টার্গেট। এমনকি ওষুধের দোকানেও অস্ত্রের মুখে ডাকাতি করেছে ওরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিল্লাল ফার্মা ও খিলগাঁওয়ের লাজ ফার্মায় ডাকাতির পর দলনেতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রবিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।গত ১ এপ্রিল রাত আনুমানিক পৌনে একটার দিকে মোহাম্মদপুরের কলেজগেট এলাকার বিল্লাল ফার্মা ও ৫ এপ্রিল খিলগাঁওয়ের লাজ ফার্মায় একই স্টাইলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারা প্রথমে একটি পিকআপে করে মুখে মাস্ক ও গামছা পেঁচিয়ে আসে। ফার্মেসিতে ঢুকে চাপাতি, দা ও লোহার রডের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় পৃথক মামলা দায়ের হয়। ডাকাতির ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম ও পল্লবী জোনাল টিম মামলা দুটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, লাজ ফার্মায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রথমে দলনেতা সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মিনি ট্রাক দুটিও তারা ছিনতাই করেছিল। একটি মিনি ট্রাক শাহ আলী এলাকা থেকে এবং আরেকটি আশুলিয়া-টঙ্গী রোড থেকে ছিনতাই করেছিল। ওই ট্রাক নিয়ে প্রতি সপ্তাহে তারা ৩-৪ দিন ছিনতাইয়ের জন্য বের হতো। বিশেষ করে বাড্ডা, রামপুরা, কালসি, বেড়িবাঁধ, আদাবর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, তুরাগ, রূপগঞ্জ, কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় ওরা নিয়মিত ডাকাতি ও ছিনতাই করে বেড়াতো।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, করোনার কারণে রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকায় ডাকাতি ও ছিনতাই করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করা যাবে বলে প্রতিদিনই রাস্তায় নামতো। গত এক মাসে ওরা শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতি করার কথা স্বীকার করেছে। পয়লা এপ্রিল মোহাম্মদপুরের বিল্লাল ফার্মাতে ডাকাতির পর বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি পাজেরো জিপ আটকে এক নারীর কাছ থেকে সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। গত ১০ এপ্রিল রামপুরা এলাকার একটি ভ্যান থেকে ২০ কার্টন চিংড়ি মাছ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। একই দিন বাড্ডা এলাকায় একটি রিকশা থামিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি মোবাইল ও ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রটি প্রতিদিনই ছিনতাই করে বেড়াতো। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে আরও অনেক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা জানা যাবে। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে দলনেতা সোহেলের সঙ্গে থাকা টিটু নামে আরও একজন এখনও পলাতক রয়েছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করা অর্থের ৪০ ভাগ নিতো দলনেতা দুজন। বাকি অর্থ অন্যদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হতো।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ডাকাত দলের শীর্ষনেতা টিটুকেও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাকে দুই-একদিনের মধ্যেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট। সে থাকে ঢাকার ডেমরা এলাকায়। অন্যদের মধ্যে সোহেলের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় থাকে সে। শাহিনের বাড়ি বরিশালে ও সোহরাবের বাড়ি শরীয়তপুরে। তারা দুজনেই কেরানীগঞ্জ এলাকায় বাস করতো। এছাড়া নেওয়াজ থাকে মিরপুর চিড়িয়াখানা এলাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *