ছেলেকে হত্যা: মৃত্যুদণ্ডিত পলাতক মা গ্রেপ্তার

ঢাকা: পরকীয়ার জেরে আপন ছেলেকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামি মা খুকি বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) গভীর রাতে ফরিদপুরের বৈঠাখালী এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১১।

র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, আসামি মা খুকি বেগমের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানায় মামলা (নং-৫) রয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি খুকি বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকার জয়নাল গাজী নামে এক ব্যক্তির পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি খুকি বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন জানতে পারে এবং এ নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়।

২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন পার্শ্ববর্তী এলাকার আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন।

এর কিছুদিন পর থেকে আরিফ হোসেন ও তার বউয়ের সঙ্গে আরিফের মা খুকি বেগমের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ঝগড়াবিবাদ হয়। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর খুকি বেগম ছেলের বউ আসমা বেগমকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এরপর ১৮ নভেম্বর রাতে খুকি বেগম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজ গৃহে ছেলে আরিফকে গরুর দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করান। আরিফ দুধ খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে খুকি বেগম তার পরকীয়া প্রেমিকসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১/২ জনের সহযোগিতায় ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, বটি ও ব্লেড দিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেন। পরদিন ১৯ নভেস্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান যে, ডাকাতরা আরিফকে মেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে গেছে। আরিফের স্ত্রী আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার সময় আরিফের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর মৃত আরিফের স্ত্রী আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞানামা ২/৩ জন ব্যক্তিকে আসামি করে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরপর থেকে আসামি খুকি আত্মগোপনে চলে যান এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাম পরিচয় গোপন করে থাকেন। ফরিদপুরেও এই আসামি নাম-পরিচয় গোপন করে বসবাস করছিলেন। মামলার ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে তার অবস্থান জানতে পারে র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১১। পরে যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ওই র‌্যাব কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *