বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) পুরো আয়ত্ত হয়নি কিংবা অমনোযোগী থাকায় পাঠ আংশিক হয়েছে অথবা অনুপস্থিতির কারণে ক্লাস মিস হলেও পিছিয়ে পড়বে না প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা। এমনকি জরুরি কোনও পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও ক্ষতির শিকার হবে না খুদে শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজন হবে না কোচিং কিংবা নোট-গাইডের। এমনই একটা ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিকের বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রমের আলাদা পোর্টাল করা হচ্ছে। শিগগিরই এই পোর্টাল তৈরি করে শ্রেণি কার্যক্রমের ভিডিও আপলোড করা হবে।
নতুন এই ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্। তারা বলেন, ‘এই ব্যবস্থায় সব খুদে শিক্ষার্থীর কাছে খুব শিগগিরই ভিডিও ক্লাস পৌঁছে দেওয়া হবে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই কাজে এটুআই’র সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।’ ইউনিসেফের কাছ থেকেও এই কাজের জন্য সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানান সচিব।
আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা যে সংকটে পড়েছি, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় আমরা নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছি। অনেক সময় দেখা যায় শিশু শিক্ষার্থীরা ক্লাসে তাৎক্ষণিক পড়া বুঝতে পারছে না। ফলে তাদের কোচিং করাতে বাধ্য হন অভিভাবকরা। কিংবা নানা কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস মিস হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা একটি নতুন অনলাইন পোর্টাল তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছি। সেখানে বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রমের ভিডিও থাকবে। যা থেকে শিক্ষার্থীরা সারা বছর প্রয়োজন মতো তার পাঠ বুঝে নিতে পারবে। শুধু করোনা পরিস্থিতির জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা নয়, সারা বছরই শিক্ষার্থীরা এই ব্যবস্থায় পাঠ নিতে পারবে।’
এই ব্যবস্থা চালু করলে আর কোচিং করানো বা নোট ও গাইড বই পড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলেও উল্লেখ করেন সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্ বলেন, ‘আমরা নতুন একটি অনলাইন পোর্টাল তৈরি করবো। এতে বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রমের ভিডিও আপলোড করা হবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে তার প্রয়োজনীয় ক্লাস বারবার দেখে তার বিষয়ভিত্তিক পাঠ আয়ত্ত করতে পারবে। শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় হয় এমন একটি নাম দেওয়া হবে এই শ্রেণি কার্যক্রমের। আমরা পোর্টাল তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি। তার আগেই ভিডিও ক্লাস প্রস্তুত করছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এটা করে ফেলবো। ধারাবাহিকভাবে আমাদের এই কাজ চলবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অনলাইন পোর্টালে ভিডিও শ্রেণি কার্যক্রম দেখাতে অভিভাবকদের সহায়তা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনলাইন ফ্রেন্ডলি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবে অধিদফতর। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভিডিও শ্রেণি কার্যক্রম দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। অনেক শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে—এ বিষয়টি মাথায় রেখে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম কমিউনিটিভিত্তিক দেখানোর ব্যবস্থা নিতেও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পুরো ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা। ’
সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর রয়েছে। আমরা সেসব নম্বরে আমাদের নেওয়া পদক্ষেপ আগে অভিভাবকদের জানিয়ে দেবো, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের ভিডিও ক্লাস দেখানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি রয়েছে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এই ছুটি আরও বাড়তে পারে। এই সময়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংসদ টেলিভিশনে প্রচারের জন্য ভিডিও ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। শিগগিরই ক্লাস রুটিন তৈরি করে প্রচার করা হবে।
কবে নাগাদ সংসদ টিভির ক্লাস শুরু হতে পারে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ আমরা সংসদ টিভিতে ক্লাস উপস্থাপন করতে পারবো।’