দেশের ১৭৫টি এনজিও’র ঋণ খেলাপি। আর তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ একহাজার ৬৭২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে অনেকগুলো এনজিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া বা আদায় করা অনেকটাই অনিশ্চিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের গৃহায়ন তহবিল থেকে ৬৩ জেলার ১৭৫টি এনজিওকে এ ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্ত এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত এনজিও’র সংখ্যা ২ হাজার ৫০১টি। এর মধ্যে একহাজার ৬১৩টি এনজিও’র নামে গৃহহীন মানুষদের ঘর তৈরি বা মেরামত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭৫টি এনজিও কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ন তহবিল থেকে ঋণ বাবদ একহাজার ৬৭২ কোটি ৬২ লাখ টাকা নিলেও তা যথাসময়ে ফেরত দেয়নি। যদিও এনজিওগুলোকে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি সহজ করতে কিস্তি নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা পালন করেনি এনজিওগুলো। তবে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেওয়া ঋণের পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। এই ঋণগুলো এখনও সমন্বয় করা হয়নি বলে জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খেলাপি এনজিওগুলোর মধ্যে বরিশালে ছয়টি, বাগেরহাটে একটি, ভোলায় পাঁচটি, বগুড়ায় দু’টি, বরগুনায় তিনটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি, চাঁদপুরে একটি, কুমিল্লায় পাঁচটি, ঢাকায় ৩৭টি, দিনাজপুরে সাতটি, ফেনীতে দু’টি, ফরিদপুরে পাঁচটি, গাজীপুরে তিনটি, গোপালগঞ্জে তিনটি, হবিগঞ্জে দু’টি, ঝালকাঠিতে একটি, যশোরে তিনটি, জয়পুরহাটে দু’টি, ঝিনাইদহে তিনটি, জামালপুরে ছয়টি, কুষ্টিয়ায় একটি, খুলনায় তিনটি, কিশোরগঞ্জে দু’টি, কুড়িগ্রামে দু’টি, মানিকগঞ্জে দু’টি, ময়মনসিংহে ছয়টি, মাদারীপুরে দু’টি, মুন্সিগঞ্জে দু’টি, নড়াইলে একটি, নেত্রকোনায় ছয়টি, নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি, নরসিংদিতে একটি, পাবনায় আটটি, পিরোজপুরে একটি, পটুয়াখালীতে দু’টি, রাজশাহীতে পাঁচটি, রাঙামাটিতে একটি, রংপুরে চারটি, শেরপুরে দু’টি, সিরাজগঞ্জে তিনটি, সাতক্ষীরায় তিনটি, সুনামগঞ্জে একটি এবং টাঙ্গাইলে ১০টি এনজিও রয়েছে।
বরিশালের হিজলা উপজেলার ‘আলোর দিশারী’ নামের এনজিও থেকে ঘর তৈরি করতে ২০১৬ সালে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ইব্রাহিম খাঁ। তিনি ৯ কিস্তিতে সুদসহ ৩৮ হাজার টাকা পরিশোধও করেছেন। একইভাবে ওই এনজিও থেকে অনেকেই ঋণ নিয়ে তা ফেরতও দিয়েছেন।
ইব্রাহিম খাঁ বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধ করে দিয়েছি। আমার কাছে আলোর দিশারী কোনও টাকা পায় না। কিন্তু এনজিওটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়া ঋণের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত পাঠায়নি। বর্তমানে এনজিওটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলোর দিশারীর নির্বাহী পরিচালক মোজাম্মেল হক হাওলাদার জানান, এনজিওটির কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে পরে যোগাযোগ করবেন বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমরা কোনও এনজিওকে গৃহায়ন বাবদ কোনও ঋণ দেই না। কাজেই এ বিষয়টি আমাদের দেখভালের আওতায় পড়ে না। খেলাপি ঋণের বিষয়ে আমার কোনও কিছুই বলার নেই।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচলক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ব্যাংকের বিধি ও নীতিমালা মোতাবেক খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা খেলাপি এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
কবে নাগাদ এসব এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব শিঘ্রই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে।’