দেশজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিভিন্ন স্থান থেকে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থায় নগদ লেনদেন সীমিত হয়ে আসছে। একইসঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া পুরো ব্যাংকিং সেবা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনও ইস্যুতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। সেজন্য সব ব্যাংকে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার (২২ মার্চ) এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি ব্যাংক তাদের প্রধান কার্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় কুইক রেসপন্স টিম গঠন করবে, যাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। একইভাবে প্রতিটি বিভাগ, জোন বা এরিয়া অফিসে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে।
দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নভেল করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিকভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়া) প্রতিরোধ করা এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাংকিং সেবা ও কার্যক্রমগুলোর বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় এই খাত করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং বিশেষত এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে কোনও বিভাগ/জোন/এরিয়া অফিসের আওতায় বিশেষ কোনও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে ’কুইক রেসপন্স টিম’ দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজনে ‘কেন্দ্রীয় কুইক রেসপন্স টিম’ এর সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করেছে, এই টিমের সদস্যদের নাম, পদবি, মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
আরও বলা হচ্ছে, প্রতিটি ব্যাংক তাদের জরুরি ব্যাংকিং সেবার তালিকা প্রস্তুত করবে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতেও যাতে এরূপ সেবা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, ব্যাংকের গ্রাহক/সেবা গ্রহীতারা যাতে ব্যাংক কার্যালয়ে/শাখায়/উপশাখায় সশরীরে উপস্থিত না হয়েই তাদের কাঙ্খিত সেবা গ্রহণ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সব ব্যাংককে তাদের ‘অনলাইন সেবা’ আরও জোরদার করতে হবে। গ্রাহকদের মোবাইল/ইন্টারনেট ব্যাংকিং এ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যেসব ব্যাংকিং সেবা ব্যাংকের হটলাইন/কল সেন্টার থেকে দেওয়া সম্ভব, সেসব সেবা উক্ত মাধ্যমেই দিতে হবে। ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের হটলাইন/কল সেন্টারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করাসহ ব্যাংকের হটলাইন/কল সেন্টার এর মাধ্যমে প্রদেয় সেবার তালিকা এসএমএস-এর মাধ্যমে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে এবং বিস্তারিত ব্যাকের ওয়েবসাইটে ও প্রতিটি শাখায় সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এরূপ স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাঙ্খিত সেবা প্রাপ্তিতে যাতে কোনও বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাপ্তাহিক রেশনিং/রোস্টারিং করতে হবে। তবে, যেসব কর্মকর্তা/কর্মচারী রেশনিং/রোস্টারিং এর আওতায় নিজ গৃহে অবস্থান করবেন, তারা আবশ্যিকভাবে নিজ গৃহ থেকে যথাসম্ভব অফিসের কাজে নিয়োজিত থাকবেন এবং জরুরি প্রয়োজনে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবেন। এই নির্দেশনা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
আরও বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রতি সংবেদনশীল ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। ব্যাংকের কোনও কর্মকতা বা কর্মচারীর মধ্যে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যথা সম্ভব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ব্যাংকে কর্মরত কোনও কর্মকর্তা/কর্মচারী অথবা পরিবারের কোনও সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা করোনা আক্রান্তের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে বা কোনও কারণে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ঘটনা ঘটলে, তাকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিন ছুটি হিসেবে ১৪ দিন বিশেষ ছুটি দিতে হবে। এই প্রকার ছুটি ‘ছুটি হিসাব’ হতে ডেবিট করা যাবে না এবং ছুটিকালকে কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীকে স্বাভাবিক নিয়মানুসারে বেতন-ভাতাদি দিতে হবে।
বলা হচ্ছে, ব্যাংক শাখা, উপশাখা, এজেন্টসহ সব কার্যালয়ের ভেতরের প্রবেশ স্থানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক শাখা, উপশাখা, এজেন্টসহ সব কার্যালয়ের ভেতরে চলাচলের পথ, দরজার হাতল, লিফ্ট ও অন্যান্য যেসব স্থানে হাতের স্পর্শ লাগতে পারে, সেসব স্থান কর্মদিবস শুরুর পূর্বে, পরে এবং কর্মদিবসে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংকের সান্ধ্যকালীন এবং সপ্তাহ শেষের (শুক্রবার ও শনিবার) সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এদিকে পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এরূপ পরিস্থিতিতে গ্রাহকের চাহিদার বিপরীতে দৈনন্দিন নগদ অর্থের সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয় সেই লক্ষ্যে ব্যাংকের শাখাগুলোতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
কোনও এলাকা/অঞ্চল সরকারি ঘোষণার মাধ্যেমে লক ডাউন করা হলে সেই এলাকায়/অঞ্চলে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সহায়তা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।