করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রান্তিক পযার্য়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১২ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ প্রণোদনা ঘোষণা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকা নতুন এবং একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গ্রহণ করবে। এখানে শুধু কৃষিখাতেই ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ড তৈরি করবো। এই স্ক্রিমে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।
মূলত গ্রামাঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি এই তহবিল থেকে তাদের জন্য দেওয়া হবে। তারা কৃষি-ফুল-ফল, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি খামার ইত্যাদি কাজে উৎপাদন করতে এই টাকা তারা ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রতিটি জমিকে উৎপাদনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কেউ কোনো জায়গা ফাঁকা রাখবেন না। এতটুকু জায়গা ফেলে রাখবেন না। যার যতোটুকু জায়গা আছে সবটুকুতে চাষাবাদ করুন।
মসলা জাতীয় পণ্য উৎপাদনে ৪ শতাংশ সুদের ঋণদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পেঁয়াজ-রসুন-আদাসহ মসলা জাতীয় পণ্য উৎপাদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। সেটা অতীতে কার্যকর করা হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি নতুন স্কিমে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। এখান থেকে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে কৃষকের জন্য বরাদ্দ দেবো।
অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শিল্প ও বাণিজ্য সেক্টরে ঘোষিত প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের শিল্প-ব্যবসা বাণিজ্য যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্য কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য আমরা কৃষির ক্ষেত্রেও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি।
গত বছরের চেয়ে এবার বেশি ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কিছু দিনের মধ্যে বোরো ধান উঠবে। কৃষক যেন এই ফসলের ন্যায্য দাম পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছর যে খাদ্য সংগ্রহ করেছে তার চেয়ে আরও বেশি ধান-চাল ক্রয় করবে। ২ লাখ মেট্রিকটনের বেশি খাদ্য ক্রয় করবে। সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বীজ-চারা সরবরাহে সরকারি বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধান-কাটা মাড়াই কাজে যান্ত্রিকীকরণ করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু কৃষিকাজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। অর্থাৎ সর্বমোট ২০০ কোটি টাকা এখানে বরাদ্দ দেবো।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বীজ, চারা বিতরণের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাতে এই কৃষি কাজটা আপনারা অব্যাহত রাখতে পারেন।
কৃষকদের মধ্যে সার সরবরাহে বরাদ্দের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সারের ভুর্তকি বাবদ আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি। আগামী অর্থবছরের জন্য এ ৯ হাজার কোটি টাকা ভুর্তকি দেওয়া হবে। যাতে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে যাদের কাজ নেই তাদের ধান কাটাসহ কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কাজ নেই তারা ধান কাটার কাজে যেতে পারেন।
গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।