ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতেই পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচিতে বাস পোড়ানোর ঘটনা রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাস পোড়ানোর ঘটনায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইলে নাশকতা সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নাশকতাকারীরা সংঘবদ্ধ হতে বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করছেন। সংঘবদ্ধ হয়ে তিন ধাপে এসব চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, বাসে আগুন দেওয়া নাশকতাকারীরা সাংকেতিক ভাষায় হামলার পরিকল্পনা ও স্থান নির্ধারণ করছেন। আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনটি ধাপে নাশকতা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তাদের সাংকেতিক ভাষায় পেট্রলকে ‘কোক’ অর্থাৎ পেট্রলের বোতলকে ‘কোকের বোতল’ বলা হয়। মিলিত হওয়ার বিষয়টিকে তারা বলছে, ‘সন্ধ্যার দাওয়াত’। এভাবে তারা একত্রিত হয়ে অতর্কিতভাবে বিভিন্ন গণপরিবহনে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কখনো আবার যাত্রীবেশে বাসে উঠে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা এ পর্যন্ত নাশকতার সময় ১৪ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছি। এ ১৪ জনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ১৪ জনের প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গ্রেপ্তারদের মোবাইল ফোন থেকে নানা তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সাংকেতিক যেসব ভাষা ও শব্দ ব্যবহার করছে, সেগুলো আমরা বুঝি। আমরা গ্রেপ্তারদের নাশকতার উৎস পর্যায়ে অর্থাৎ কারা কারা পরিকল্পনা-প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নে জড়িত, আমরা তাদের শনাক্ত করেছি। দ্রুতই সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, সবগুলো হয়তো সামনে আসছে না, তবে প্রতিদিনই কেউ না কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। নাশকতা দমনে ডিএমপি আইনগত সক্ষমতার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আশা করছি, এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত সব নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।
সবশেষ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) মিরপুর ১০ নম্বরে বিআরটিসির বাসে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের হাফিজুর রহমান (৩৫), শহীদুল ইসলাম (২০) ও শামীম (৪৫)।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, হাফিজুরের মোটরসাইকেল থেকে পেট্রল বের করে বাসে আগুন দেওয়া হয়। একরাতে ১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার টার্গেট ছিল তাদের। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা তাদের বাসে আগুন দেওয়ার কাজ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তারা।
আটক হাজিফুর রহমানের মোটরসাইকেলের পেট্রল দিয়ে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিনজনকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে এক হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয় এবং বাকি চার হাজার টাকা আগুন দেওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল।
এরইমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঘিরে নাশকতা বাড়ার আশঙ্কায় দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি তৎপরতা শুরু করেছেন বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, তফসিল ঘিরে নাশকতার চেষ্টা হলে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যত ধরনের নিরাপত্তা-পরিকল্পনা প্রয়োজন, সবই আমরা নিয়েছি। পাশাপাশি ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সব কার্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা নেই, তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ যদি বাস পোড়ানো- ভাঙচুরের চেষ্টা করে এবং অরাজকতার মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করে, তবে ডিএমপি জিরো টলারেন্স নীতি দেখাবে। বিন্দুমাত্র অরাজকতা সহ্য করা হবে না।