গাজীপুরে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে দেড় বছরের শিশুকে অপহরণের ১০ ঘণ্টা পর অপহৃত শিশুসহ ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় র্যাব তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের কানের দুল, ৪টি মুঠোফোন ও নগদ টাকা উদ্ধার করে। র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপহৃত শিশু শাহরিয়া ইসলাম আরাফ (১৬ মাস) মহানগরের গাছা (শরীফপুর) এলাকার আশরাফ আলী ও শাকিলা দম্পতির মেয়ে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠি গ্রামের কামরুজ্জামান ওরফে রফিকের মেয়ে জেরিন ইশরাত জুলি (২২) এবং তারিন নুশরাত তুলি (১৬), শরীয়তপুরের ড্যামুডা উপজেলার গোয়ালকুয়া গ্রামের আব্দুর রউফ সিকদারের ছেলে আমিনুল ইসলাম (২৯) ও একই জেলার সখীপুর উপজেলার দুলারচর গ্রামের মফিজ মাতুব্বরের ছেলে সুমন মিয়া (৩০)। তারা মহানগরের চান্দরা সাইনবোর্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) জেরিন ইশরাত জুলি বাসা ভাড়া নেয়ার উদ্দেশ্যে আশরাফ আলী দম্পতির বাসায় যায়। বাসা পছন্দ হওয়ায় তাদেরকে বলে আসে দুই দিন পর এসে ভাড়ার টাকা অগ্রিম (অ্যাডভান্স) দিয়ে যাবে। সে অনুযায়ী শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ছোট বোন তারিন নুশরাত তুলিসহ অগ্রিম টাকা দেয়ার জন্য ওই বাসায় যায়। এ সময় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের সাথে থাকা ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস আশরাফ আলীসহ তার পরিবারের সবাইকে খাওয়ায়। জুস খেয়ে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়লে অপহরণকারী দুই বোন শিশু শাহরিয়া ইসলাম আরাফ ও ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, মুঠোফোন ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
তাদেরকে দীর্ঘ সময় অজ্ঞান অবস্থায় দেখে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বিকেল ৪টায় জ্ঞান ফেরে। এ সময় তাদের শিশুছেলেকে খুঁজতে থাকে। পরে অপহরণকারীরা সন্ধ্যায় ভিকটিমের মায়ের মুঠোফোন থেকে তার বাবার কাছে শিশু অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। দাবি অনুযায়ী টাকা না দিলে শিশুকে হত্যা করে কিডনি বিক্রি করার হুমকি দেয়।
শিশু অপহরণের বিষয়টি র্যাবকে জানালে তারা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এ সময় বিকাশে টাকা লেনদেন করার সময় মহানগরের গাছা থানার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে অপহরণকারী দুই বোনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার একটি ফ্ল্যাটের পরিত্যক্ত গোপন কক্ষ থেকে তাদের অপর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে এবং অপহৃত শিশু শাহরিয়া ইসলাম আরাফকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা স্বীকার করে পরস্পরের যোগসাজশে তারা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে শিশুকে অপহরণ করে। এ ঘটনায় অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে গাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।