ঘরেই নামাজ আদায়ের অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে মুসলমানদের ঘরেই নামাজ আদায়ের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান তিনি। আজ বুধবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি আরও বলেন, ‘করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন।’

প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের আত্মীয়-স্বজন বিদেশে আছেন, তারাও নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন। সবার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সংকটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ মেনে চলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরামর্শ, আমাদের যতটা সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যারা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসীকে হোম-কোয়ারেন্টিনসহ (বাড়িতে সঙ্গনিরোধ) সব নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।

শেখ হাসিনার কথায়, ‘মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসী ও সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা মনে করেন, কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে। যেমন– ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি দিলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওয়া, যেখানে-সেখানে কফ-থুথু না ফেলা।

করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয় বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর, ‘এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও বয়স্ক মানুষদের জন্য জীবাণুটি প্রাণসংহারী হয়ে উঠেছে। সেজন্য আপনার পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দিন। তাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন এবং ভাইরাসমুক্ত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিন।’

দেশের নাগরিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। তিনি মনে করেন, ‘আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। সবসময় খেয়াল রাখুন, আপনি, আপনার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হয়। আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে ও সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।’

গত জানুয়ারির গোড়ার দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। এটি এখন বিশ্বের ১৯৫টির মধ্যে ১৬৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

গতকাল (২৪ মার্চ) পর্যন্ত ৪ লাখ ২২ হাজার ৮শ’রও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে, ১৮ হাজার ৯০৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১ লাখ ৯ হাজার ১০২ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *