করোনাভাইরাসের এই সংকটকালেই টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট ও ইন্টারনেটনির্ভর সেবাকে সরকার জরুরি সেবা ঘোষণা করলেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেলিভারিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশান ও মিরপুরে একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও একটি ই-কমার্সনির্ভর কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও ডেলিভারি ভ্যান আটকে রাখেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেলিভারিম্যানদের কাছে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অনুমতিপত্র থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তা দেখতে চাননি। তারা চান বিভাগীয় কমিশনারের সরাসরি চিঠি, যা অনুমোদনপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি সেবা চালু রাখার অনুমোদনের যে চিঠিটি আমাদের দিয়েছিলেন, সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পৌঁছেনি। ফলে আজ (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়ে ঝামেলা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে আজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পৌঁছে যাবে। আমরা আশা করছি, আগামীকাল থেকে পণ্য ডেলিভারিতে কোনও সমস্যা হবে না।’
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এই সমস্যা হয়েছে কমবেশি সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের। ডেলিভারিম্যানরা মাস্ক, গ্লাভস পরে স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সব ধরনের নিয়ম মেনে পণ্য ডেলিভারি দিতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়। আশা করছি, দ্রুত এ বাধা দূর হয়ে যাবে।
মীনাক্লিকের ডেলিভারি পারসন বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর কাফরুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারধরের শিকার হয়েছেন। তার কোনও কথা শোনেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ই-কমার্স পণ্য হোম ডেলিভারির কথা বললেও তারা শোনেননি। তার বাইকটিও ভেঙে ফেলা হয়।
হেড অব মীনাক্লিক আহমেদ শোয়েব ইকবাল বলেন, ‘আমরা মীনা বাজার সুপারশপের পণ্য যেমন—মাছ, মাংস, চালডালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মীনাক্লিকের মাধ্যমে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছতে দিই। শাওন হোসেন আমাদের ডেলিভারি রাইডার। আজ পশ্চিম কাফরুলে পণ্য ডেলিভারি দিতে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে মারধর করে। তার বাইক ক্ষতিগ্রস্ত করে। শাওনের বাইকে ই-ক্যাবের লোগো ছিল। বিভাগীয় কমিশনারের চিঠির কপি ছিল। এটুআই এর ডাটাবেজে মীনাক্লিকের ডেলিভারি রাইডারদের তালিকা রয়েছে। পুলিশ সেটা চেক করলেও দেখতে পেতো ছেলেটি কে, কী কাজে যাচ্ছে। শাওন এসব দেখাতে চাইলেও পুলিশ কিছুই দেখতে চায়নি।’
আহমেদ শোয়েব ইকবাল বলেন, ‘ই-কমার্স তো জরুরি সেবার মধ্যে পড়ে। মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিয়ে গিয়ে এই নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে।’
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান সহজ রাইডের প্রধান নির্বাহী মালিহা এম কাদির বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সাপ্লাই শর্টেজ আছে বলে জানতে পেরেছি। পণ্য ডেলিভারিতে সমস্যা হচ্ছে।’
জানা গেছে, রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাও এর ডেলিভারি সেবা পাঠাও টঙ সেবার কর্মীরাও বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর ও গুলশানে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন।
ই-কমার্স নির্ভর কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ইকুরিয়ার বিডির ডেলিভারিম্যান মিজান জানালেন, ‘সকাল থেকে ডেলিভারির কাজে তিনি কোনও সমস্যায় না পড়লেও তাদের দুজন ডেলিভারিম্যান পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকম, পিকাবু ডটকমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ডেলিভারি দেয়। আজ আমাদের ডেলিভারি ভ্যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটকে দেন। আমাদের ডেলিভারিম্যানদেরও আটকে রাখেন। আমরা তাদের কাছে বিভাগীয় কমিশনারের চিঠি, বিআরটিএ’র অনুমোদন দেখালেও তারা গাড়ি ছাড়েনি। মিরপুর ও গুলশানে এ ঘটনা ঘটে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান করেছি। মিরপুরে বিকালে সেবাদান বন্ধ রেখেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ যাদের সন্দেহ করেছে, তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পেরেছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি, তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেককে বাসায়ও ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে জরুরি সার্ভিস হিসেবে কোনও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা ই-কমার্সভিত্তিক কুরিয়ারের ডেলিভারিম্যানকে আটকানো বা হয়রানি করা হয়নি।’