অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা আর তদবির বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সরকারদলীয় হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) নূর উর রশীদ চৌধুরী ওরফে এজাজ চৌধুরী। শুধু চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতে চলা জুয়ার আসর থেকেই প্রতিদিন তার আয় ছিল ৫০ হাজার টাকা। অভিযোগ যাচাই-বাছাই আর প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়ার পর পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এজাজকে জিজ্ঞাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এজাজকে তলবি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাঠান দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তিনি বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। নূর উর রশীদ চৌধুরীকে ২১ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, এজাজের পাশাপাশি তার বাবা আব্দুল মালেক, বড়ভাই সুলতান উর রশীদ চৌধুরী এবং স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারের সম্পদেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছে। সূত্র জানায়, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও বিআরটিতেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামেও অভিযান হয়। ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হালিশহরে আবাহানী ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জুয়ার আলামত পাওয়া যায় সেখান থেকে। ক্লাবটির মহাসচিব হলেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। ফলে চট্টগ্রামের জুয়ার আসর পরিচালনার সঙ্গে সামশুল হক চৌধুরীর নামও উঠে আসে। র্যাবের অভিযান নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি। ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘তাস খেলা বন্ধ করলে ক্লাবগুলো চলতে পারবে না।’
সামশুল হক চৌধুরীর এমন বক্তব্যের পর চট্টগ্রামের অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো কারবারের সঙ্গে যাদের নাম আলোচিত হয় তাদেরই একজন হলেন এজাজ চৌধুরী। গত ২৩ অক্টোবর অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সামশুল হক চৌধুরীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দুদক।
দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুর দিকে সামশুল হক চৌধুরীর পিএস এজাজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ নম্বর ১৮১/২০১৯। এজাজের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় গত নভেম্বরে। শুরুতে সিদ্ধান্ত ছিল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম অভিযোগ অনুসন্ধান করবে। পরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নির্দেশে দুদক প্রধান কার্যালয় এজাজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে সামশুল হক চৌধুরী ও এজাজ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাদের পাওয়া যায়নি।
এজাজ চৌধুরীর যত অভিযোগ:
১.শুদ্ধি অভিযান শুরুর আগে আবাহনীসহ চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতে জুয়ার আসর বসতো। ক্যাসিনোর পাশাপাশি ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়সা (চাঁন তারা) খেলা চলতো সেখানে। সেখান থেকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে পেতেন এজাজ।
২.চট্টগ্রামের টেরি বাজারে ফেমাস শপিং মলের মালিক এজাজ। শপিং মলটির বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। জুয়ার আসর, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি আর তদবির বাণিজ্যের টাকা দিয়ে এই সম্পদ করেছেন এজাজ।
৩.২০১২ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে আবদুল মালেক ওরফে মালেক চেয়ারম্যানের গোডাউন থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার বাজার মূল্য দেখানো হয় ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। র্যাবের অভিযানে মালেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার না হলেও কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে আসামি করা হয়।ওই বছরেরই ৩০ জুন র্যাব-৭ এর কর্মকর্তা রতন দেবনাথ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা ও স্পেশাল জজ আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার বিচার কাজ স্থগিত রয়েছে। ওই মামলার আসামি মালেক চেয়ারম্যান হলেন এজাজের বাবা। এজাজের প্রভাবেই মালেক চেয়ারম্যান ইয়াবা ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
৪. সম্পদের প্রাচুর্য্য দেখাতে এজাজ তার গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার হরিণখাইনে রাজকীয় তোরণ নির্মাণ করেছেন।
৫. চট্টগ্রাম ও পটিয়ায় জমি এবং ফ্ল্যাট আছে এজাজের।