সিলেট: সিলেটে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে চুরি হওয়া ১৮ লাখ ৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত সিকিউরিটি কোম্পানির তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে টাকাগুলো উদ্ধার করা হয়।
রোববার (০৫ নভেম্বর) সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার হাতিডহর গ্রামের হোসাইন আহমদের ছেলে আলবাব হোসেন লিমন (২২), দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার নৈখাই পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে আমিনুল হক (২৪) ও একই থানার নৈখাই মাঝপাড়া গ্রামের সিদ্দেক আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম মুন্না (২৫)।
তাদের মধ্যে লিমনকে সিলেট মহানগরের শিবগঞ্জ থেকে, আমিনুলকে ঢাকার মতিঝিল এলাকার সাজেদা টাওয়ারস্থ সিকিউরেক্স কোম্পানির অফিস থেকে এবং নুরুলকে ভৈরব থানাধীন উজানভাটি হোটেলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ২৮ অক্টোবর রাতে সিলেট মহানগরের সুবিদবাজার এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। পরে ৩০ অক্টোবর বুথে গিয়ে ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকার হিসেবে গরমিল পায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় বুথে টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের দুই কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেন ব্যাংকটির সিলেট অঞ্চলের এটিএম বুথের ইনচার্জ সন্দ্বীপন দাস।
এরপর শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) দুপুরে আলবাব হোসেন লিমননগরের শিবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আলবাব ও আমিনুল সিকিউরেক্স নামের প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা।
এদিকে, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য মতে ১৮ লাখ ৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে লিমনের বসতঘর থেকে ১০ লাখ, নুরুলের বর্তমান ঠিকানা সিলেটের দক্ষিণ সুরমর কদমতলী এলাকার স্বর্ণশিখা আবাসিক এলাকার ১০৮ নং বাসা থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার, আমিনুলের বসতঘর থেকে ২১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
বাকি টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আসামিরা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন এবং ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা তারা খরচ করেছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ আরও বলেন,গত ২৭ অক্টোবর বুথে টাকা আপলোড করা হয়। কিন্তু ৩০ তারিখ বুথে ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা গরমিল দেখা যায়। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৫ থেকে ১২টা ১৫ মিনিটের মধ্যে মাথায় কালো ক্যাপ, মুখে মাস্ক পরে ২-৩ ব্যক্তি ব্যাংকের বুথের ভোল্ট খুলে টাকা চুরি করে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় সিকিউরেক্স সিকিউরিটি কোম্পানির এটিএম অফিসার আলবাব হোসেন ও আমিনুল হকের নাম উল্লেখ করে গত শুক্রবার এসএমপির এয়ারপোর্ট মামলা করা হয়। কোম্পানিটির সিলেট জোনের এটিএম অফিসার সন্দীপন দাস বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এরপর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মূলত, গত ২৮ অক্টোবর চুরি হলেও শুক্রবার মামলা হওয়ার পর ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
এদিকে, ব্যাংকের বুথের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ২৮ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৬ মিনিট থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত ওই বুথে মাথায় ক্যাপ, মুখে মাস্ক, চোখে কালো চশমা ও হাতে গ্লাভস পরা দুই ব্যক্তি ওই এটিএম বুথে প্রবেশ করেন। বুথের আশপাশে নিরাপত্তাপ্রহরী উপস্থিত ছিলেন না। বুথের ভেতরে প্রবেশ করা দুইজনের মধ্যে একজন বুথের নিচের দিকের অংশ খুলেন এবং অন্যজন তার পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীকে বুথের সামনে উপস্থিত হতে দেখা যায়। ভেতরে থাকা দুই ব্যক্তির দিকে তিনি উঁকি দেন। ভেতরে থাকা এক ব্যক্তিকে নিরাপত্তাকর্মীকে শাটার নামানোর জন্য ইশারা দিতে দেখা যায়। পরে তিনি শাটার নামিয়ে দেন। একপর্যায়ে ওই দুই ব্যক্তি বুথের লকার খুলে ভল্ট নামিয়ে সেখান থেকে টাকা নিয়ে নিজেদের ব্যাগে ভরে চলে যান।