দেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাচারের মামলায় গ্রেফতার বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সাবেক কনস্টেবল দেব প্রসাদ সাহাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বেনাপোল বন্দর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দীন এ তথ্য জানান।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরা থেকে দেব প্রসাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কর্মরত রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলা শহরে, বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সাহা।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর দেব প্রসাদকে যশোর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
আদালতের বিচারক সাইফুদ্দিন হুসাইন রোববার (১৯ ডিসেম্বর) রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর (রোববার) বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বাদী হয়ে বেনাপোল থানায় দেব প্রসাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার দেব প্রসাদ সাহা ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত ছিলেন। তার বিপি নম্বর ৭৫৯৮০৫১১৯৮ ও কনস্টেবল নম্বর ৭০৩। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় ভারতের অনেকের সঙ্গে তার ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এর জের ধরে তিনি যখন-তখন নো ম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে ভারতে যাওয়া-আসা করতেন। ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর অফিস সহকারী আবু হানজালা রানা ও সৈনিক শাহনেওয়াজ শাহিনের সাথে তার পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা দুইজন বেনাপোলে মাঝেমধ্যে এসে ভারতের এস চক্রবর্তী ও পিন্টু নামে দুইজনের কাছে বাংলাদেশের গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপাচার করতেন।
২০১৮ সালের শেষের দিকে দেব প্রসাদ সাহা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবলিত একটি পেনড্রাইভ নো ম্যান্স ল্যান্ড পার হয়ে ভারতে পাচার করেন। পনের দিন পর আবু হানজালা রানার কাছ থেকে এনে আবারো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবলিত পেনড্রাইভ ভারতের এস চক্রবর্তী ও পিন্টুর কাছে হস্তান্তর করেন দেব প্রসাদ সাহা।
গত ২৫ অক্টোবর ঢাকার কমলাপুরের একটি হোটেল থেকে ডিজিএফআই ও র্যাবের হাতে সৈনিক শাহানেওয়াজ শাহিন আটক হন। এ সময় তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ একটি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয় এবং ভারতে তথ্যপাচারের বেশ কিছু তথ্য দেনতারা।
পরে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি অনুসন্ধানে নামে। তদন্তে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও ভারতের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আরেফের সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও সিডির মাধ্যমে ভারতে বাংলাদেশের তথ্যপাচারের বিষয়টি উঠে আসে।
সেনাসদস্য শাহনেওয়াজ ও অফিস সহকারী আবু হানজালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ভারতে পাচারের বিষয়টিও দেব প্রসাদ স্বীকার করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।