বরগুনায় শাহনেওয়াজ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যা মামলায় দুই সাক্ষীকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন করেন। এর আগে ১ জানুয়ারি মিন্নিসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।
পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তিনি গত ৪ জানুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী জাকারিয়া বাবু ও মো. হারুনের বাড়িতে তিনটি মোটরসাইকেলে পাঁচ জন যুবককে নিয়ে সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখায় বলে অভিযোগ উঠেছে। মিন্নি এ সময় সাক্ষীদের বলেছেন, জাকারিয়া বাবু ও হারুণ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে রিফাত শরীফের মতো পরিণতি হবে। এ কারণে মিন্নি বাইরে থাকলে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারে বলেই তার জামিন প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। আদালত মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে আদেশ হবে।’
জামিন বাতিলের আবেদন প্রসঙ্গে মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারি আসলাম বলেন, ‘এটা হাস্যকর ও কাল্পনিক গল্পের মতো। আমরা আদালতের কাছে মিন্নির জামিনে থাকার বাস্তবতা তুলে ধরেছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনেই মিন্নি তার বাবার জিম্মায় বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি বাড়ি থেকে তো দূরে থাক, ঘর থেকেও বাইরে বের হন না। আমরা মহামান্য আদালতের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আদালতে দরখাস্ত দিয়ে জানিয়েছি, ১ জানুয়ারি মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত শরীফ হত্যার যে অভিযোগ গঠন করা হয় তার বিরুদ্ধে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আদালত আমাদের বলেছেন, যেদিন মহামান্য হাইকোর্ট তাকে মামলা স্থগিত রাখার আদেশ দেবেন সেদিন আদালত মামলা স্থগিত করবেন।’
গত ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও প্রিন্স মোল্লা জামিনে রয়েছেন।