পটুয়াখালীতে এবছরই পুরোদমে চালু হবে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। দু’টি ইউনিটের মধ্যে এরই মধ্যে একটি ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা চার মাস পর। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে ১৩২০ মেগাওয়াট। পুরোদমে কেন্দ্রটি চালু হলে খুলনা ও বরিশালের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ও বরিশালে এখন মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে খুলনায় ১০টি, বরিশালে ছয়টি। এছাড়া কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে প্রতিদিন এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এর বাইরে বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের জন্য পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করা চীনের প্রকৌশলীরা বাংলাদেশে এখনও আসতে পারেননি। তারা কবে আসতে পারবেন তাও জানা যায়নি। এ কারণেই দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু করা যায়নি।
খুলনা জোনে মোট ১০ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ভেড়ামারায় ৬০ ও ৪১০ মেগাওয়াট, ফরিদপুরে ৫০ মেগাওয়াট, গোপালগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট, খুলনায় ২২৫ ও ১১৫ মেগাওয়াট, নোয়াপাড়ায় ১০০ মেগাওয়াট, রূপসায় ১০৫ মেগাওয়াট, মধুমতিতে ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র ছাড়াও ভেড়ামারা সাবস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে আসছে ১০০০ মেগাওয়াট। ফলে এই জোনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনক্ষমতা ২ হাজার ৩২৮ হলেও এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২ হাজার ৩১৪ মেগাওয়াট। যদিও এখন সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী মাত্র ১ হাজার ৪৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ৮৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অলস পড়ে আছে।
বরিশাল জোনের ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে আছে বরিশালে ৪০ ও ১১০ মেগাওয়াট, ভোলায় ৩৩, ২২৫ ও ৯৫ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রগুলোর বর্তমান উৎপাদনক্ষমতা ৪৬২ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্রিডে দেওয়া হয় মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এখনই বিদ্যুৎ পড়ে থাকে ২১২ মেগাওয়াট।
পিডিবির প্রতিদিনের চাহিদার হিসাব অনুযায়ী খুলনা ও বরিশাল জোনের বিদ্যুতের চাহিদা যথাক্রমে ১ হাজার ১০৩ এবং ২৩৯ মেগাওয়াট। ফলে সবমিলিয়ে দুই জোনের ১৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা এখন ২ হাজার ৭৭৬ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে মোট চাহিদা ১ হাজার ৩৪২ মেগাওয়াট। এই অবস্থায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ই্উনিট চালু হলে এই বাড়তি বিদ্যুৎ যদি অন্য এলাকা সরবরাহ করা না যায় তাহলে হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে নইলে ওই এলাকার প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘পায়রা চালু হলে ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। যেহেতু সে এলাকায় চাহিদা কম সেহেতু একটি বড় কেন্দ্র চালু হলে ছোট কেন্দ্রগুলোর আর প্রয়োজন হবে না।’
পায়রার বিদ্যুৎ সঞ্চালনে দু’টি সঞ্চালন লাইন করা হচ্ছে। একটি পটুয়াখালী (পায়রা) থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটারের ৪০০ কেভির ডাবল সার্কিট লাইন। অন্যটি পায়রা-পটুয়াখালী ২৩০ কিলোভোল্টের (কেভি) ৪৭ কিলোমিটারের লাইন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত লাইনটি চালু হয়েছে। এই লাইনের মাধ্যমে পায়রা হতে পটুয়াখালী সদর-বরগুনা-ঝালকাঠি-বরিশাল-মাদারীপুর হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় নবনির্মিত ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে সংযুক্ত হয়েছে। কিন্তু এই দুই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলেই বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে। এর বাইরে দিতে হলে আলাদা সঞ্চালন লাইন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।