মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রাইভেটকার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে বেড়াতো দুই তিনজন। সুযোগ পেলেই পথচারীদের ব্যাগ টেনে নিয়ে যেত। কখনও কখনও পথচারীদের আটকিয়ে সবকিছু কেড়ে নিত। আর এই কাজে ব্যবহার করা প্রাইভেটকারগুলো ছিল ভাড়া করা।
এই চক্রের কবলে পড়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ মুগদা ইউনিক বাস কাউন্টার ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি স্থানে নিহত হন তারিনা বেগম লিপা। এ ঘটনায় রাজধানীর মুগদা থানায় নিহতের স্বামী গোলাম কিবরিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ডিবি পূর্ব বিভাগের একটি টিম শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুগদা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মিজুয়ান মিয়া (২৯), শেখ লিটন (৩৮), আব্দুল মজিদ (৩৩) ও রফিক হাওলাদার (৪২)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি ছুরি, দুটি প্রাইভেটকার, একটি ট্যাব ও নগদ ১৭শ’টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার(এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, গ্রেফতার হওয়া চারজনের মধ্যে মিজুয়ান মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি আরও জানান, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা দুটি প্রাইভেট কারের একটি তারিনা বেগম লিপা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও উদ্ধার হওয়া ট্যাবটিও ছিল ওই নারীর।
মিজুয়ানকে গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে মুগদা এলাকার তারিনা বেগম লিপা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। তারা খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি অবস্থান করছিল।
ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে লিপা রিকশায় যাওয়ার সময় তার হাতে থাকা ব্যাগটি দেখে তা নেওয়ার জন্য টার্গেট করে এবং রিকশাটিকে প্রাইভেটকারে করে বসে ধীরগতিতে অনুসরণ করতে থাকে। পরে দক্ষিণ মুগদার ইউনিক বাস কাউন্টার অতিক্রম করার পরে তারা লিপার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে টান দেয়। এ সময় ভিকটিম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিকশা হতে পড়ে মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজুয়ান ডিবি পুলিশকে জানায়, তারিনা বেগম রিকশা থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য সে প্রাইভেটকারের লুকিং গ্লাসে দেখেছিল। ঘটনার পরদিন বিভিন্ন মিডিয়ায় তার নিহতের খবর দেখে মিরপুরে গা ঢাকা দেয় তারা।
ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এই চক্রটি প্রায় বিশ বছর ধরে এই অপরাধ করে আসছিল। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে মিজুয়ানের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি, ফেনী মডেল থানায় একটি, শেখ লিটনের নামে রমনা থানায় দুটি, সবুজবাগ থানায় দুটি ও আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানা ও পল্টন থানায় একটি করে মামলা রযেছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাইয়ে বেশিরভাগ সময় গাড়িতে দুইজন থাকতো। একজন গাড়ি চালাতো, অপরজন ব্যাগ ধরে টান দিতো। নিজেদের কোনও গাড়ি না থাকলেও প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেটকার নিয়ে বের হতো এই চক্রের সদস্যরা। গাড়ি ম্যানেজ করার কাজটি করতো গ্রেফতার হওয়া শেখ লিটন। অধিকাংশ সময় রফিক হাওলাদারের কাছ থেকে রাতে চার-পাঁচ ঘণ্টার জন্য নিয়ে আসতো লিটন। আর এজন্য পাঁচ হাজার টাকা করে পেতো রফিক।
এছাড়া পলাতক মনার বিরুদ্ধে ২০০৮, ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালের মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিনা বেগমের ব্যাগ টেনে নেওয়ার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন মনা। সে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।