মধ্যরাতে বারে মারামারি, ব্যবসায়ীর মৃত্যু

রাজধানীর বনানীর ‘সুইট ড্রিম’ বারে মারামারির ঘটনায় এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, সুইট ড্রিম কর্তৃপক্ষ আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা নেয়নি। বারের সামনে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা ওই ব্যবসায়ীকে কয়েকজন শ্রমিক সিএনজিতে তুলে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই ব্যবসায়ীর নাম শেহজাদ খান (৪৫)। তিনি বনানীর বিকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৮টার দিকে বনানী থানার এসআই মোখলেছুর রহমান উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোখলেছুর রহমান জানান, বনানী কাঁচাবাজার সংলগ্ন হোটেল সুইট ড্রিম-এর নিচে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতাহাতিতে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ওই ব্যবসায়ী পড়ে ছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্ত করলে জানা যাবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী শেহজাদ খান মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাতে সুইট ড্রিম বারে প্রবেশ করেন। সেখানে তার সঙ্গে আরেক ব্যক্তির কথা কাটাকাটি হয়। রাত ২টার দিকে দুজন একবার বের হন। পরে তারা আবার বারের ভেতরে প্রবেশ করেন। বারের ভেতরে তাদের মধ্যে প্রথম দফা হাতাহাতি হয়। ভোর ৪টার দিকে তারা আবার বার থেকে বের হলে রাস্তায় দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসময় অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন ব্যবসায়ী শেহজাদ খান। ঘটনাটি নিরাপত্তারক্ষীরা কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিন্তু তারপরেও তাকে যথাসময়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সকালে সুমন, নাঈম ও সাদ্দাম নামে তিন ব্যক্তি অচেতন অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সুমন জানান, সকালে তারা ৩ জন একসঙ্গে কাওরান বাজারে কাঁচামাল নামাতে যাচ্ছিলেন। বনানী কাঁচাবারের সুইট ড্রিম হোটেলের পাশে অচেতন অবস্থায় একজনকে পড়ে থাকতে দেখে তারা এগিয়ে যান। সেসময় আরও কয়েকজন লোক ছিল। তারা ওই ব্যক্তির পকেটে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে উত্তরার একটি ঠিকানা পান। পরে তাকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তারা।

সুমন জানান, ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে রেখে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ঠিকানায় গিয়ে জানতে পারেন সেখানে অন্য পরিবার থাকে। পরে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ফোনে মাসুদ নামে এক যুবক ফোন দিলে তার পরিচয় জানা যায়। সুমন বলেন, সুইট ড্রিমের নিরাপত্তাকর্মীরা অচেতন ওই ব্যক্তিকে শুধু সিএনজিতে তুলে দিয়েছে। তারা কেউ সঙ্গে যায়নি।

নিহত ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী ফারিয়া জাহান দীপ্তি জানান, তার স্বামী একজন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী। তার ধারণা, কেউ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। সম্প্রতি তার স্বামী কোটি টাকার একটি টেন্ডার পেয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, শেহজাদ খানের সঙ্গে যার বিতণ্ডা হয়েছিল তাকে সনাক্ত করা হয়েছে। তারা কেন বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন এবং সুইট ড্রিম হোটেলে বর্ডার না হয়েও ভোর পর্যন্ত তারা কেন ওই হোটেলে অবস্থান করেছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সুইট ড্রিম হোটেল কর্তৃপক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

যোগাযোগ করা হলে সুইট ড্রিম বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল আমিন বলেন, আমাদের বারে উনি (ব্যবসায়ী শেহজাদ খান) অনেক দিন পর এসেছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় তাকে বের হতে বলা হলেও তিনি বের হননি। রাত দুইটার দিকে সঙ্গে থাকা একজনকে নিয়ে তিনি বের হয়ে যান।

ফয়সাল আল আমিন বলেন, আমাদের স্টাফরা ভোর ৪টার দিকে জানতে পারে কাঁচাবাজারের ফুল মার্কেটের সামনে ওই গ্রাহকের সঙ্গে আরেকজনের মারামারি হচ্ছে। পরে আমরা স্টাফরা তাদের আলাদা করে দেয়। আহত একজনকে সিএনজিতে তুলে দেয়। এখন আমার বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে কারা কী করবেন, তার দায় তো আমাদের ওপর আসার কথা না।

নিহতের স্বজনরা জানান, শেহজাদ খানের বাবার নাম নজরুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ভাগলপুর গ্রামে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে এক বছর আগে দিপ্তী নামে আরেক নারীকে তিনি বিয়ে করেন। তার এক কন্যা সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *