প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) ঘরে বসে পরার জিনিস নয়। এটা কেবল যারা রোগী দেখবেন, রোগী অ্যাটেন্ড করবেন, তাদের পরতে হবে। যদি এভাবে র্যান্ডম ঘরে ঘরে সবাই পরতে থাকি…। রোগীর সেবা যারা করবেন তারাই পিপিই পাচ্ছেন না, কিন্তু অনেকেই ঘরে-বাইরে এটা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর থেকে বিরত করা দরকার।’
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ৬৪ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা পিপিই নিয়ে জনমনে আতঙ্ক এবং যাদের দরকার নেই তারা পরছেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এরপর তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিপিই তাদেরই দরকার যারা করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা করেন। যে রোগীর সেবা করবে না তার এ পোশাকের দরকার নাই। অযথা পিপিই পরার কারও কোনও প্রয়োজনই নাই। অযথা এর অপব্যবহার করবেন না। একইসঙ্গে এগুলো ডিসপোজালের কী ব্যবস্থা আছে, সেটাও আমাদের দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের রোগী, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটারে পরার মতো মানসম্মত পিপিই আমরা তৈরি করবো। কথা বলেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীর সেবা করতে যে পিপিই ব্যবহার হবে, সেটা সাধারণ কারও ব্যবহার করার প্রয়োজনই নেই। অনেকেই দেখি পিপিই পরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা কেন পরছেন জানি না, মনে হয় এটা ভালোভাবে প্রচার করা দরকার, সচেতনতা দরকার। ঘরে বা সাধারণ কাজ যারা করবেন তাদের পিপিই পরার প্রয়োজন নেই।’
করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিষয়ে জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী জানান, ৪৯ জন রোগীর মধ্যে ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সুস্থ হওয়া এই ১৯ জনের মধ্যে ১০ জনই মাদারীপুরের, দু’জন নারায়ণগঞ্জের। বাকিরা ঢাকার। এই ৪৯ জনের মধ্যে ১৫ জন বিদেশ থেকে এসেছিলেন, বাকিরা তাদের আক্রান্ত হয়েছেন পরিবারের মধ্যে অথবা তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন।
তবে রোগী সংখ্যা কম হওয়ার কারণে অনেকেই এখন সন্দেহ প্রকাশ করছেন, রোগী হয়তো আরও আছেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘কিন্তু এক্সটেনসিভলি যাদেরই লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে তাদের প্রত্যেককে আমরা পরীক্ষা করি। ইতোমধ্যে পরীক্ষা পদ্ধতি বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেসব জায়গা বেশি সেনসিটিভ যেমন−কক্সবাজারে আইইডিসিআর ফিল্ড লেভেল রয়েছে, সেখানেও আজ থেকে কাজ শুরু হবে।’
একইসঙ্গে যারা কোয়ারেন্টিন শেষ করেছে অথবা চিকিৎসা শেষ করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এলাকার মধ্যে তারা একটু আলাদা অনুভব করছেন, বাড়িওয়ালা বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার বিষেয়েও একটু দ্বিধা কাজ করছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনে যারা রয়েছেন…তারা যেন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার কথা উপস্থাপন করেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে।
পিপিই আছে নাকি নাই এ বিষয়ে অনেকের কনফিউশন রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘যথেষ্ট পরিমাণে পিপিই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু র্যাশনাল হওয়া খুব প্রয়োজন। পিপিই হচ্ছে পার্সোনাল প্রটেকশনের বিষয়। যেটা যে লেভেলে লাগবে, সেটা সেই লেভেলে হলেই যথেষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘যারা রোগীর সংস্পর্শে যাচ্ছেন না, তাদের সার্জিক্যাল মাস্ক পরলেই চলে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য, কিন্তু বিশ্বব্যাপীই এটার সংকট রয়েছে। তাই খুব সতর্কভাবে ব্যবহার করি, পরবর্তী সময়ে যেন কোনও রকমের শঙ্কায় না পড়ি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেখানে যে সেবা প্রয়োজন সেটা নিশ্চিত করতেও আইইডিসিআর কাজ করছে। হাসপাতালে যিনি রোগীর সংস্পর্শে যাবেন এবং যিনি কোনও প্রসিডিউর করবেন, তারই একমাত্র পরিপূর্ণ পিপিই পরার প্রয়োজন। বাকিদের মাস্ক এবং যাদের রোগীকে বারবার স্পর্শ করতে হবে তাদের গ্লাভস পরা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, সাবান পানি দিয়ে বারবার হাত ধুলেই ম্যাক্সিমাম প্রটেকশন দেয়। হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিতে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য পিপিই ব্যবহারের নিশ্চিত করা গেলে আর সংকট থাকবে না।