শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর ও শিক্ষা ভবনের ১৪টি প্রকল্পের ভবন নির্মাণ ও কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করেন বিতর্কিত ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম শফিক। যুবলীগের বিগত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক এই সম্পাদক ১৯৯৮ সাল থেকে এই তিন জায়গায় নিজের আধিপত্য ধরে রেখেছেন। আর এসব করেই কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।
ইইডি, মাউশি ও শিক্ষা ভবনে ‘কমিশন শফিক’ নামে পরিচিত এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের মামলার তদন্তে নেমে এমন তথ্যই পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর শফিকের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ দায়ের মামলাটির বাদী সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। মামলায় তার বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ২ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন শফিক। ওই দিনই ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
দুদক জানায়, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজ হিসেবে পরিচিত শফিক শিক্ষা ভবনে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকারও হয়েছেন। প্রতি টেন্ডারে ৫ শতাংশ করে কমিশন না পেলে অন্যদের কাজ করতে না দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
বর্তমানে ঢাকায় শফিকের যেসব কাজ চলছে—
১. ঢাকা কলেজের ১০ তলা ভবন নির্মাণ;
২. ধানমন্ডি মহিলা কলেজের ছয়তলা ভবন নির্মাণ;
৩. নায়েমের একটি ভবনের সপ্তম থেতে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ;
৪. মিরপুর বাঙলা কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন ও মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ;
৫. সরকারি তিতুমীর কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং
৬. ধামরাই টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণ।
শুধু ঢাকাতেই চলছে তার ২০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি। প্রতিটি কাজে নিম্নমানের রড ও বালু ব্যবহারের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
শফিকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
১. ২০০০ সালে ইইডিতে দরপত্র দখলে নেওয়ার সময় অস্ত্রবাজি করেন শফিক। এতে ইইডি ও মাউশি অধিদফতরের চার কর্মকর্তা-কর্মচারী গুরুতর আহত হন। পরে গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। বহিষ্কার হন ছাত্রলীগ থেকে।
২. ২০০১ সালে ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতাসীন হলেও শফিকের টেন্ডারবাজি অব্যাহত থাকে।
৩. ২০০৯ সালে সরকারদলীয় রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হন শফিক।
৪. ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল শিক্ষা ভবনের টেন্ডার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল ছাত্রলীগের মাহী গ্রুপের সঙ্গে শফিক বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন ৬০ জন। শফিকের বিরুদ্ধে মামলাও করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলার তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিললেও আসামি পায়নি পুলিশ। পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
৫. ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্পের জন্য ২০ হাজার ৫০০টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সরবরাহের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সেই টেন্ডারে অংশ নিয়ে শফিকের অনুসারীরা টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) কর্মকর্তাদের মারধর করে।
৬. ২০১৭ সালে টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান শফিক ও তার বাহিনী।
৭. গত বছরের জুনে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অধীনে আসবাবপত্র, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র কেনাকাটার টেন্ডার চূড়ান্ত করার সময় মাউশির ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউর উইংয়ের এক উপপরিচালকের কক্ষে হামলা করেন শফিক।
শফিকের যত সম্পদ
১. ঢাকায় সাতটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট।
২. রাজধানীর দক্ষিণখানে দুই বিঘা জমির ওপর বাংলো।
৩. হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজায় ৩০টি দোকান এবং
৪. হাতিরপুলের ৬৯ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডে অফিস (শফিক এন্টারপ্রাইজ)।