শিক্ষককে পেটালো ছাত্রলীগ

মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় ফরিদা আক্তার নামের একজন শিক্ষককে পিটিয়েছে কর্মীরা। তিনি রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।  এই ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ।

বুধবার (৪ মার্চ) ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরকারি বাঙলা কলেজে শিবির সন্দেহে একজনকে পুলিশে দিচ্ছিলো ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। এই ঘটনা নিয়েই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।’

জানা যায়, বর্তমানে বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগের কোনও কমিটি নেই। তবে হাফিজ আলম নামে এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্বে দিচ্ছেন, অপর একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক চৌধুরী। এই দুই গ্রুপের মধ্যেই সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক চৌধুরী বলেন, ‘২ মার্চ সাজেদুল ইসলাম রাজু নামে এক ছাত্রকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করা হয়। পরে তার ফেসবুক আইডি দেখে ও অন্যান্যদের সহায়তায় তাকে শিবির হিসেবে শনাক্ত করা হয়। সেদিন সন্ধ্যার দিকে রাজুকে ধরে ‍পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ তাকে কলেজে না যাওয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়। পরদিন (৩ মার্চ) সকালে রাজু আবারও কলেজে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ধরতে যায়। এসময় তার পক্ষ হয়ে তেড়ে আসে ছাত্রলীগ নেতা হাফিজ আলম। কিছুটা ধস্তাধস্তির পর হাফিজ আলম ও রাজু হোস্টেলে যায়। সেখান থেকে লাঠি নিয়ে এসে পুরো ক্যাম্পাস মহড়া দেয়। এসময় আগের দিন রাজুকে পুলিশে দেওয়ার পর যারা ক্যাম্পাসে মিছিল করেছিল, তাদের খুঁজতে থাকে তারা। পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমি এগিয়ে গেলে আমাকেও আঘাত করে। হাসপাতালে থেকে আমার কানে পাঁচটি সেলাই নিতে হয়েছে।’

শিক্ষককে পেটানোর প্রসঙ্গে মানিক বলেন, ‘একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা রাজু ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের ধাওয়া করে। এসময় রাজু ইসলামের ইতিহাস বিভাগের লেকচারার ফরিদা আক্তারের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এসময় অন্যরা রাজুকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে গেলে শিক্ষক হাত বাড়িয়ে আটকাতে চান। এতে তার আঙুল ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এছাড়া ওই শিক্ষক শরীরের অন্যান্য অংশেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।’

এদিকে অপর গ্রুপের হাফিজ আলম বলেন, ‘কমিটি না থাকলেও আমরা ছাত্রলীগ করি। আমার সঙ্গে যারা চলাফেরা করে, তাদের কয়েকজনকে শিবির আখ্যায়িত করে মারধর করতে এসেছিল মানিক গ্রুপের ছেলেরা। এতে আমরা বাধা দেই। পরে তারা দলবেঁধে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এসময় আমরা বেশ কয়েকজন আহত হই। সবাই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

ঘটনার পর মঙ্গলবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন আহত শিক্ষক ফরিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘লাঠির আঘাত খেয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর চেতনা ফিরে পেয়ে নিজেকে পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় দেখি। ঘটনার সময় একটা ছেলে আমার কাছে এসে বললো- ম্যাডাম আমাকে বাঁচান। পেছন থেকে অনেকগুলো ছেলে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসছিল। ওই ছেলেটাকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে মার খেতে হলো। আমার দুই হাত ও মাথায় ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *