ঢাকা: সরকার পরিবর্তন করতে চাইলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কয়েকদিন পড়ে নির্বাচনের তফসিল হবে, তারপর অবরোধ দিচ্ছে গাড়িতে আগুন দিচ্ছে এভাবে চলতে থাকবে নির্বাচন পর্যন্ত এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাদের চরিত্রই এ ধরনের, তারা সব সময় সন্ত্রাস ডেকে, ষড়যন্ত্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে। নির্বাচন কমিশন সময়মতো নির্বাচনে ডাক দেবেন।
সবাই সেখানে অংশ নেবে এটা হলো জনগণের প্রত্যাশা। আমরা আশা করি, তারা নির্বাচনে আসবে।
নির্বাচন ছাড়া সরকার পাল্টানোর সংবিধানে আর কোনো এখতিয়ার নেই। কাজেই তাদের নির্বাচনে আসতে হবে যদি সরকার পরিবর্তন করতে চায়।
তারা কি এ ধরনের জ্বালাও-পোড়াও করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিতো বলেছি ভিডিও ফুটেজ দেখে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের খুঁজে খুঁজে বের করছে। তাদের ধরে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশের জনগণ যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। জনগণও আমাদের ধরিয়ে দিচ্ছে। আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, যারা পেট্রলের বোতল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন, তাদের জনগণ ধরিয়ে দিচ্ছেন। জনগণ যখন ঘুরে দাঁড়াবেন, তখন এগুলো এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দলটি যে কার্যক্রম করছে তাদের জন্য এটা নতুন নয়। তারা যখন বুঝে গেছেন, তাদের থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, ভোট যুদ্ধে তারা আর জয়ী হতে পারবেন না। কাজেই ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ধরনের সহিংসতা ঘটিয়েছে। জানমালের ক্ষতি করছে। হাজার মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে এবং বাস সম্পদ সবকিছু অগ্নিদগ্ধ করেছে এগুলো তাদের পুরোনো ইতিহাস। একুশে আগস্ট গ্রেনেড মেরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। কোনটা না করেছেন তারা। এসব কর্মকাণ্ডে জনগণ যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখনি আমরা দেখছি আরেকটি নতুন করে ষড়যন্ত্র করা যায় কি না তাদের বিদেশি প্রভুদের ধরে টরে তাদের আরেকটা কিছু করা যায় কি না সে উপায় খুঁজছে।
তিনি বলেন, এদেশের সরকার পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তা না করে আগুন দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মেরে, জিম্মি করে সরকার পরিবর্তন করবে সে দুঃস্বপ্ন তাদের করা উচিত না। এদেশের জনগণ অনেক ধৈর্যশীল অনেক শান্তিপ্রিয় কোনোদিন এমন কর্মকাণ্ড তারা পছন্দ করেন। ধৈর্যের বাধ হারিয়ে ফেললে তারাই এর প্রতিরোধ করবে।
অফিস চলছে, সব যানবাহন চলছে। সবকিছু চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্লেন, রেল, নৌযান ও বাস চলছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য এসব তারা করছেন। বাধ ভেঙে গেলে জনগণই রুখে দাঁড়াবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার সরকারের কাছে দুইটি বিষয়ে কথা বলেছেন, একটি হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আরেকটি হলো বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে এ নিয়ে মতামত জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথমতো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা যারা করছেন সেই দলের চেয়ারপারসন হলো খালেদা জিয়া। আপনারা দেখেছেন ২৮ তারিখে কি কর্মকাণ্ড করলো। আমাদের একজন পুলিশকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে৷ আমাদের ১০১ জন পুলিশকে তারা আহত করেছেন, আপনাদের (সাংবাদিক) ছাড় দেয়নি। বাসে হেলপার ঘুমিয়েছিল তাকেসহ বাসে আগুন দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সবগুলো কর্মকাণ্ড তারা করেছেন, এখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিচ্ছে না। যেখানে জানমাল রক্ষা করতে নিরাপত্তাবাহিনী তাদের রক্ষা করছে তাদের ওপরও চড়াও হচ্ছে। তাহলে এই সন্ত্রাস বা অগ্নিসন্ত্রাস কারা করছে। আমার মনে হয় তাদের তথ্যে কোনো ভুল আছে। ভুল তথ্য পেয়েই তারা সরকারকে অনুরোধ করেছে। আমি মনে করি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সঠিক কাজটি করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভিডিওফুটেজ দেখে যারা প্রধান বিচারপতির বাসায় ঢুকেছে, জার্জেস কম্পাউন্ডে ঢিল ছুড়েছে, আইডিবিতে ঢুকে যারা ভাঙচুরে করেছেন সম্পদ বিনষ্ট করেছেন, হাসপাতালে ঢুকে সেবিকাদের মারধর করেছেন, আমাদের নারী নেত্রীদের মারধর করেছেন এসবগুলো যাচাই-বাছাই করে যারা এগুলো করেছেন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা প্রমাণ ছাড়া কাউকে ধরছি না।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে তিনি বলেন, দেখুন খালেদা জিয়া দুইটি মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক উদার। তাকে বলা হয় মানবতার মা। তিনি প্রথমেই বেগম জিয়াকে বাসায় থেকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যেটা কেউ কোনো দিন করেছে কি না আমার জানা নেই। তার (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত করে এই ব্যবস্থাটা করেছেন। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার করেছেন। সর্বোচ্চ চিকিৎসা তিনি পাচ্ছেন। কাজে বিদেশে গেলে কি হবে না হবে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার দেখার বিষয়টা হলো তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসাটা পাচ্ছেন কি না, দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসার ঘাটতি হয়নি বলে আমি মনে করি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে এ অবস্থা থাকলে তারা নির্বাচনে আসবেন কি না এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসবেন কি আসবেন না, এটা তাদের এখতিয়ার। আমাদের কথা হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে লঙ্কাকাণ্ডের আগে আমরা বিএনপির কোনো নেতাকর্মীদের ধরিনি। সেখানে যখন নৃশংসতা ও বর্বরতা চলছে, তখন তারা মঞ্চে বসে ছিলেন। তারা তো দুঃখ প্রকাশ করতে পারতেন জাতির উদ্দেশ্যে যে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু কর্মী এসব করেছে। এটা আমাদের কাম্য ছিল না।
তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখ প্রকাশের পরিবর্তে তারা অব্যাহত হরতালের ডাক দিয়েছেন। একজন বাসের হেলপার ঘুমিয়েছিলেন, বাস পাহারা দিচ্ছিলেন, তাকেসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাসটি। এতে কি করা হয়? বিএনপির বড় বড় নেতারা কি দায় এড়াতে পারবেন? তারা বলতে পারতেন— তোমরা বাসে আগুন দিও না, তোমরা এই মানুষ হত্যা করো না। বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা এসব থেকে বিরত থাকবে বলেই আশা করছি।