নিজ জেলা পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু চেয়ে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল শিশু শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। পটুয়াখালী সরকারি জুবলী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাসকে পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের আশ্বাসও দিয়ে সে চিঠির জবাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় চার বছর পর সেই আশ্বাস পূরণ করতে সরকার ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে (জেড ৮০৫২) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো, কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে পায়রা নদীর ওপরে ১ হাজার ৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদর এবং ঢাকার সরাসরি, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যয়সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা।
সূত্র আরও জানায়, সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১ হাজার ৪২ কোটি ২৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্প ব্যয়ের পুরো অর্থ জোগান দেওয়া হবে। এ সেতুর মাধ্যমে জেলা সদর পটুয়াখালীর সঙ্গে মির্জাগঞ্জ উপজেলা সরাসরি সম্পৃক্ত হবে। চলতি বছরের মার্চে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। সেতুটি নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে পুরো ব্যয়ের অর্থ জোগান দিচ্ছে।
একনেকে অনুমোদনের জন্য সেতু বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬০০ মিটার। সেতু (ভায়াডাক্টসহ) নির্মাণ করা হবে ১ হাজার ৬৯০ মিটার। গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে ১ হাজার মিটার। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে ৮ দশমিক ৫ একর। সেতুর টোল প্লাজা নির্মাণসহ কম্পিউটারাইজড টোল আদায় পদ্ধতি চালু করা হবে ৬টি। ওজন স্টেশন স্থাপন করা হবে দুটি। থাকবে টোল মনিটরিং ভবন, পুলিশ স্টেশন এবং প্রকল্পের জনবলের জন্য আবাসিক ভবন।
এদিকে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পশ্চাৎপদ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর সঙ্গে সমৃদ্ধ জেলা, আন্তজেলা ও আন্তজেলার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ উন্নয়ন কৌশলের আওতায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে পদ্মা সেতুসহ আরও কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো সম্পর্কিত নবম লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে দৃঢ় অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মিত হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী, বরিশাল এবং ঢাকার সরাসরি, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পটুয়াখালীর শিশু শীর্ষেন্দুর চিঠিতে অনেক মানবিক যুক্তি ছিল। শীর্ষেন্দুর চিঠিতে প্রকল্পটি শীর্ষে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শিশু শীর্ষেন্দুকে দেওয়া কথা রেখেছেন। ২০২৫ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেতু দিয়ে যান চলাচল করবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী, বরিশাল এবং ঢাকার সরাসরি, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।