সোনারগাঁয়ে পুলিশের নির্যাতনে ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আসামি ধরতে গিয়ে নির্যাতন করে নূরুল ইসলাম নামে এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জামপুর ইউনিয়নের বুরুমদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নুরুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত ফালু মিয়ার ছেলে। নির্যাতনের শিকার নুরুল ইসলামকে আড়াইহাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইলিয়াস আহমেদ ও একজন কনস্টেবলকে একটি কক্ষে আটক করে রাখেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম তাদের ছাড়িয়ে আনেন।

নূরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের নির্যাতনে ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামের মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসী সন্ধ্যার পর থেকে ওই বাড়িতে ভিড় করে আছেন।

তবে পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার বাড়িতে গাঁজা উদ্ধার অভিযানে যান পুলিশ সদস্যরা। তাদের দেখে ওই মাদক ব্যবসায়ী স্ট্রোক করে মারা যান।

নিহত নূরুল ইসলামের ছোট মেয়ে মিথিলা আক্তার জানান, তার বাবা একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। তিন বছর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ার পর থেকে তিনি বেকার ছিলেন। সোমবার দুপুর ২টার দিকে তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের এএসআই ইলিয়াস আহমেদ ও আরও একজন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে ঘরে প্রবেশ করেন। এক পর্যায়ে তার বাবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। সেখানে তার বাবার সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ সদস্যরা তার বাবাকে কিল ঘুষি, লাথি ও তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। পরে তাকে ছেড়ে দিতে এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না পেলে চলমান রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়। পুলিশ সদস্যদের দাবি অনুযায়ী তাদের ৫০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান নিহত ব্যবসায়ীর মেয়ে মিথিলা আক্তার।

টাকা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা চলে যাওয়ার পর ওই কক্ষে গিয়ে বাবাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান মিথিলা। সেই সময়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ ছিল। পরে তাকে পাশ্ববর্তী আড়াইহাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

মিথিলা আক্তার দাবি করেন, তার বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তিনি পানি পান করতে ও ইনহেলার ব্যবহার করতে চেয়েছেন। পুলিশ তা করতে দেয়নি। পুলিশের নির্যাতনেই তার বাবার মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের আরেক মেয়ে শিলা জানান, তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, নিহত ব্যক্তি একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তার জানামতে, একাধিকবার পুলিশ তাকে গাঁজাসহ আটক করেছে। জানতে পারলাম আজও তাকে আটক করতে এসেছে।

তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করতে গেলে পুলিশ দেখে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, পুলিশ নির্যাতনে হত্যার ঘটনা সত্য নয়। মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক না পেয়ে পুলিশ চলে আসার পর ওই ব্যক্তির মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আবারও ওই বাড়িতে যান পুলিশ সদস্যরা। তবে পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *