লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
বুধবার (৮ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ওই কেন্দ্রে ভোট নেওয়া কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন।
দুপুর ১টার দিকে তিনি কেন্দ্রটি পরিদর্শনে যান।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রিটার্নিং কর্মকর্তা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টা থেকে সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, দায়িত্বে থাকা ৮ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ পুলিশ সদস্য, ৮ আনসার সদস্য, প্রার্থীদের ১৬ পোলিং এজেন্টের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপ-নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সফিকুর রহমান বলেন, আমাকে তদন্তের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- সেটি বাতিল করা হয়েছে।
পরে নির্বাচন কমিশন থেকে উপনির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার, ডিসি এবং এসপিকে পৃথক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘটনাটি তদন্ত করছেন।
উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, কেন্দ্রে ভোটে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আজ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ঘটনাটি তদন্ত শুরু হয়েছে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নিগার বলেন, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার (৮ নভেম্বর) থেকে আমাদের তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর (রোববার) লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে আজাদ হোসেন নামে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই নেতাকে ৪৩টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। গত তিনদিন ধরে আজাদের কোনো খোঁজ নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।
আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন। এর আগে দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। গত অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ।
তবে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু দাবি করেছেন, ব্যালটে সিল মারা যুবকটি ছাত্রলীগের কেউ নন। ছাত্রলীগ থেকে তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। সে শিবির কর্মী। যদিও তার এ দাবির স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া স্থানীয়ভাব খোঁজ নিয়েও আজাদের সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৩ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৪ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টির, জাতীয় পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী অংশ নেয়। মোট ১১৫টি কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনের দিন দুপুরেই অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ এনে জাপা ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।
ভোট গ্রহণ শেষে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে গোলাম ফারুক পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রাকিব হোসেন লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪৬ ভোট। গোলাপ ফুলে দুই হাজার ১২৬টি ও আম প্রতীকে ৫১৩টি। চার লাখ তিন হাজার ৭৪৪ ভোটারদের মধ্যে ভোট পড়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ৬১২টি, এর মধ্যে ভোট বাতিল হয়েছে এক হাজার ৫২৮টি। যা মোট ভোটের ৩১ দশশিক ৮৫ শতাংশ।