দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনগ্রসর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৎস্যচাষ বাড়াতে চায় সরকার। এজন্য ১১৮ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সুফলভোগীদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্য অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়বে। এ লক্ষ্যে প্রণীত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে) অনুমোদন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় ভৌগোলিকভাবে দেশের পাহাড়ি দুর্গম পার্বত্য এলাকায় মৎস্যচাষ উপযোগী ক্রিক উন্নয়ন, মৎস্য হ্যাচারি সংস্কার, প্রদর্শনী খামার স্থাপন, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নেওয়া হবে। ফলে মৎস্য চাষের নতুন নতুন জলাশয় তৈরি হবে। এতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পানির অভাব দূর হবে, বেকার যুবক-নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একইসঙ্গে এই প্রকল্প দেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে। এছাড়া প্রকল্পটি পার্বত্য অঞ্চলের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
জানা গেছে, ১১৮ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর। দেশের ৩টি পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে একনেক সূত্রে জানা গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে মৎস্য অধিদফতরের আওতায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, এ প্রকল্পে প্রাধান্য পাবে পার্বত্য এলাকাগুলোতে থাকা প্রাকৃতিক ক্রিকের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। প্রকল্পের আওতায় বাঁধ ও ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে ৮১৪টি ক্রিক উন্নয়ন ও বিদ্যমান ৮০টি ক্রিক সংস্কার করা হবে। প্রসঙ্গত ক্রিক বলতে বোঝায় পাহাড়ে অবস্থিত ছড়া বা ঝিরি যার দুই অথবা তিনদিকে পাহাড় বা টিলা এবং অন্যদিক খোলা। সেই খোলা অংশে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে যে জলাশয় সৃষ্টি করা হয় সেটাই ক্রিক।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্রিকের উন্নয়নের পাশাপাশি এ প্রকল্পে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ১৬টি বিভিন্ন ধরনের মৎস্য অফিস নির্মাণ করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মাছ চাষের ওপর মোট ৮১৪টি প্রদর্শনী পুকুর খনন করা হবে। ৭টি মৎস্য অভয়াশ্রম নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৫৪০ জন সম্ভাব্য সুফলভোগী খামারি ও ২২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৩ হাজার ৬০০ দরিদ্র জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হবে। উপজেলা পর্যায়ে ২৬টি, জেলা পর্যায়ে ১২টি এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ২টি ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন কেনা হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান দেশের পিছিয়ে পড়া জনপদগুলোর অন্যতম। দুর্গম পাহাড় আর অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা। এ অঞ্চলটি পাহাড়ি ছড়া, ক্রিক, পাহাড়ের পাদদেশের ক্রিক ও গিরিখাত দ্বারা সমৃদ্ধ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের রূপকল্প-২০২১ এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি রফতানি করা এবং একইসঙ্গে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্যমান বজায় রাখা। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হবে, যা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পানির অভাব দূর হবে, বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পার্বত্য এলাকায় মৎস্যচাষ উপযোগী ক্রিক উন্নয়ন, মৎস্য হ্যাচারি সংস্কার, প্রদর্শনী খামার স্থাপন, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নেওয়া হবে। ফলে মৎস্য চাষের নতুন নতুন ক্ষেত্র ও জলাশয় তৈরি হবে, যা তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ জানিয়েছেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি সহায়ক হবে। দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি পুকুর খনন করা হবে, এতে দুর্গম এলাকার মানুষদের পানি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে এই প্রকল্পটি।