প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশ ইতালি। মহামারীতে পরিণত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি পুরো ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। কিন্তু থামছে না বিপর্যয়, প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটির ব্যস্ততম শহরগুলো পরিণত হয়েছে জনশূন্য নগরীতে। যেন একেবারে কোথাও কেউ নেই, জনমানবহীন এক ভূতুড়ে নগরী। সারাদেশের ফার্মেসি ও আলিমেন্টারি (খাবারের দোকান) ছাড়া সব কিছুই বন্ধ রয়েছে।
ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪১ জনে। শনিবার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ১৫৭ জন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬৬ জন রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে গত সোমবার থেকে পুরো ইতালিকে ‘রেডজোন’র আওতাভুক্ত ঘোষণা করার পর থেকেই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন দেশটির প্রায় ৬ কোটি মানুষ।
আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, থিয়েটার, সিনেমা, স্টেডিয়াম, কনসার্টসহ জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউনের কারণে রাতের বেলা মানুষ বের হতে না পারলেও জানালায় দাঁড়িয়ে সমস্বরে গান গেয়ে নিজেদের চাঙ্গা রাখছেন।
ইতালির মিলানে বসবাস করেন প্রবাসী বাংলাদেশি শোহেব আহেমেদ নীরব। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সবার মাঝেই উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা এখানে বন্দি জীবন যাপন করছি, রাস্তাঘাট ফাঁকা ও জনশূন্য, এখানকার প্রায় সব কিছু বন্ধ। বাইরে বের হওয়া যাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মাইকিং করে বাইরে যেতে মানা করছে। এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি সবাই।
ভেসেন্সা শহরে বসবাসরত আরেক বাংলাদেশি সিদ্দিক হাওলাদার বলেন, ‘এখনকার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্রসহ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। অযথা বাইরে গেলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুব আতঙ্কিত। তবে যথাযথ নিয়ম মেনে চললে আশা করি আমরা খুব শিগগিরই এই পরিস্থিতি থেকে বের আসব।
ইতালির পাদোভা অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য শহরের চেয়ে বেশি। সেখানকার বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ইব্রহিম খান বলেন, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। গত শুক্রবার ইতালিতে একদিনেই ১৭৫ জনের মৃত্যুর খবরে সবাই আতংকিত। শহরের ব্যস্ততম সড়কপথগুলো ফাঁকা, শপিংমল হাটবাজার পর্যটনকেন্দ্র জনশূন্য। এক ভীতিকর পরিস্থিতিতে আছি সবাই।
ইতালির সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। দেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় গণপরিবহণগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিছু কিছু বাস চললেও প্রায় সব ফাঁকা, যাত্রী নেই কেউ। বাসের ভেতরে আলাদা করে ঘেরাও দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো যাত্রী চালকের কাছাকাছি যেতে না পারেন।
ইতালির সব শহরের প্রবেশদ্বারে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এক শহর থেকে অন্য শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ এই নিয়ম বা আইন অমান্য করলে তাকে শাস্তি বা জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
জনজীবনে প্রভাব ছাড়াও ভাইরাসের প্রকোপে থমকে আছে ইতালির অর্থনীতি। চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা।