করোনা ভাইরাস মহামারির মুখে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে চীনাদের খাদ্যাভ্যাস। সে তালিকায় স্থলজ-জলজ বিষাক্ত থেকে শুরু করে সহজলভ্য, বিরল, বিপন্ন প্রায় সব জাতের প্রাণীই আছে। কিন্তু, বাছবিচারহীন খাদ্যাভ্যাসের ফলে করোনা ভাইরাসের মতো অনেক কিছুই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে জীবন বিপন্ন করে তুলতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত।
সম্প্রতি প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসও চীনের উহান শহরের এক বন্যপ্রাণী বিক্রির বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানায় চীন। এতে করে নতুন করে বিতর্কের মধ্যে পড়ে তাদের খাদ্যাভ্যাস। অবস্থাগতিক দেখে মনে হচ্ছে, চীনারাও ব্যাপারটি আমলে নিয়েছে।
এরই সূত্রে গত সপ্তাহে চীনের প্রথম কোনো অঞ্চল হিসেবে কুকুর খাওয়া নিষিদ্ধ করেছে শেনজেন শহর। শুধু কুকুর নয়, এখন থেকে বিড়ালের মাংস বিক্রিও নিষিদ্ধ এ শহরে।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, চীন আগামীতে কুকুরকে ভক্ষণযোগ্য প্রাণীর বদলে পোষা প্রাণী হিসেবে তালিকভুক্ত করতে পারে। দেশটির বন্যপ্রাণী বেচা-কেনা সংক্রান্ত আইনটিও পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে খবরে জানানো হয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, সম্প্রতি দেশটির কৃষি বিভাগ সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত নতুন একটি নীতি প্রস্তাব করেছে। এতে বলা হয়, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কুকুর তথাকথিত গৃহপালিত (ও ভক্ষণযোগ্য) প্রাণী থেকে মানুষের একান্ত সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
‘কুকুরকে এখন আর গৃহপালিত ও ভক্ষণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। চীনেরও তা করা উচিত নয়।’
জনমত জানতে খসড়া এ নীতি বর্তমানে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগেও সার্সসহ আরও কিছু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনাদের খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সার্স ভাইরাসটি বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বলে জানা যায়। করোনা ভাইরাসও বাদুড় থেকে ছড়িয়েছে বলে অনেকের ধারণা, কারও কারও মতে বিপন্ন প্রাণি বনরুই থেকে এ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বলাই বাহুল্য, চীনাদের খাদ্য তালিকায় বাদুড়, বনরুই দুই-ই আছে। ফলে এসব ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনেকেই তাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে আঙুল তোলে।
সব মিলিয়ে করোনার চরম ভুক্তভোগী চীনারা বর্তমানে সার্বিকভাবেই নিজেদের খাদ্যাভ্যাস পুনর্বিবেচনা করছে। আর এতে করে সম্প্রতি দেশটিতে কুকুর খাওয়া ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। সম্ভবত আগামীতে তা আরও পাকাপোক্ত হবে। হরহামেশাই তাকে আর চীনাদের পেটে চালান হতে হবে না।