দিল্লির তাণ্ডব প্রতিহত করে আলোচনায় পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ

দিল্লির হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব থেকে বহু মানুষকে রক্ষা করে প্রশংসা পাচ্ছেন ভারতের এক পুলিশ কর্মকর্তা। নিরাজ জাদাউন নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা পার্শ্ববর্তী রাজ্য উত্তর প্রদেশে কর্মরত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে টহল দেওয়ার সময় দুইশো মিটার দূরে দিল্লির কারায়াল নগর থেকে বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পান। আর তারপরই প্রচলিত রীতি ভঙ্গ করে নিজের টিম নিয়ে অন্য রাজ্যে ঢুকে পড়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করেন। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া তাণ্ডবে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে নীরবতার অভিযোগ উঠলেও এমন সাহসী ভূমিকায় প্রশংসিত হচ্ছেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ঘিরে গত রবিবার থেকে দিল্লিতে শুরু হয় নজিরবিহীন তাণ্ডব। হিন্দুত্ববাদী নেতাদের উস্কানির জেরে শুরু হওয়া এই তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত ৩৮ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। হামলার শিকার মানুষদের অভিযোগ পুলিশের কাছে প্রতিকার চেয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

উত্তর প্রদেশের পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ জাদাউন জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলির শব্দ শোনার পর এর উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখতে পান দিল্লির অভ্যন্তরে ৪০-৫০ জন মানুষ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তাদের একজন পেট্রোল বোমা নিয়ে লাফ দিয়ে একটি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। ভারতের পুলিশ সদস্যদের অন্য রাজ্যে ঢুকতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তবে ওই সময়ে সেই রীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের অনুগত দল নিয়ে কারায়াল নগরে ঢুকে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ জাদাউন বলেন, ‘আমি সীমান্ত পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বিপদ সত্ত্বেও একাই যেতে চেয়েছিলাম কারণ এটা আমার এলাকার বাইরে। ওই ১৫ সেকেন্ড ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়। সৌভাগ্যক্রমে আমার টিম আমাকে অনুসরণ করে আর পরে ঊর্ধ্বতনদের জানানোর পর তারাও সমর্থন করে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অল্প কয়েক জন আর দাঙ্গাবাজরা সশস্ত্র থাকায় পরিস্থিতি বিপদজনক ছিলো। আমরা প্রথমে তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করি কিন্তু তা ব্যর্থ হলে পুলিশ গুলি শুরু করবে বলে সতর্ক করি। তারা পিছু হটে কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আমাদের ওপর পাথর ছোড়া শুরু করে, গুলির শব্দও শুনতে পাই’।

এমন অবস্থায় জাদাউন ও তার দলের সদস্যরা অবস্থান ধরে রাখে আর দাঙ্গাবাজরা পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে। হিন্দি দৈনিক ‘আমার উজালা’র প্রতিবেদক রিচি কুমার জাদাউনের সিদ্ধান্তকে তার দেখা সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক ছিলো। দাঙ্গাবাজরা ভারী অস্ত্র সজ্জিত ছিলো আর কারও কথা শোনার অবস্থায় ছিলো না। আমি তাদের রক্তপিপাসু বলতে চাই। তারা পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপ শুরু করে কিন্তু জাদাউন পিছু হটেননি’।

পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ জাদাউন বলেন তিনি যেসব দাঙ্গাবাজদের দেখেছেন তারা আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলো। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক দোকানে বাঁশের মজুদ রয়েছে। আগুন ধরে গেলে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো আর তা ঘটতে দিলে দিল্লিতে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যেত’।

তবে নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত হতে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা নিরাজ জাদাউন। তিনি বলেন, ‘আমি নায়ক নই। আমি যেকোনও ভারতীয় রক্ষার শপথ নিয়েছি। আমি শুধুমাত্র আমার কর্তব্য করেছি কারণ চোখের সামনে মানুষ মরতে দিতে পারি না। আমরা থামানো মতো অবস্থায় ছিলাম আর সেটাই করেছি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *